মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ’, তালেবানের মধ্যে বিভেদের খবর উড়িয়ে দিলেন নেতৃবৃন্দ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৫ পিএম

গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্য সহ তালেবানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রুপের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতৃত্বের মধ্যে বিভেদের খবর অস্বীকার করেছেন।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর তালেবানের মন্ত্রিসভার ঘোষণার পর এই দ্বন্দ্বের খবর ছড়িয়ে পড়ে। দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও তালেবানের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়েছিলো। পরে আবদুল গনি বারাদার এক অডিও বার্তায় এমন কোনো সংঘর্ষ ও তার নিহত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে বুধবার এক টিভি সাক্ষাৎকারে কোনো প্রকার সংঘর্ষ ও মতবিরোধের কথা অস্বীকার করেন মোল্লা বারাদার।

বুধবার তালেবানের এক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে আবদুল গনি বারাদার ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিলুর রহমান হাক্কানির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সরকারে কূটনীতিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে কে প্রাধান্য পাবে, তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের খবর জানানো হয় বিবিসির প্রতিবেদনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপমন্ত্রী ও তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদসহ বিভিন্ন নেতা এই খবরকে গুজব বলে অস্বীকার করেছেন।

অপরদিকে অন্তর্বর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই আনাস হাক্কানি বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, তালেবান নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামি আমিরাত ইসলামি ও আফগানি মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। আমাদের প্রিয় আফগানিস্তানে শান্তি, উন্নতি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ।’

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়ে থাকা আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ। তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে। এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।

২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়। তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে। দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ডেডলাইন থাকলেও ৩০ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়। মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান। ৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। তালেবানের অগ্রসরে আশরাফ গনির কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জেরে আফগান প্রশাসন ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা।

তবে কাবুলের উত্তরের দুর্গম পাঞ্জশির প্রদেশ শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গিয়েছিলো। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধারা এই উপত্যকায় অবস্থান নিয়েছিলো। ৬ সেপ্টেম্বর পাঞ্জশির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান। এর পর ৭ সেপ্টেম্বর নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় দলটি। সূত্র : ডন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:১৬ পিএম says : 0
ভাই তালেবান হয় কেউ অপদস্থ হয় কেউ ছোট এটাতে কিছু আসে যাবে না,শান্তিতে দেশ পরিচালনা করুন ,ইসলাম কে রক্ষা করতে হলে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,লোভে পাপ পাপে মৃত্যু সে গুলি কেউ করবেন না,সাব ধান আপনাদের মধ্যে ক্ষতি করতে কিছু ভালো মানুষ আপনাদের ভিতরে ঢুকে শয়তানের বড় ভাই হয়ে যাবে ,আপনাদের মধ্যে আবার দল গত করার জন্য,কিন্তু আপনারা সাবধান শয়তানের কথায় কান দিবেন না,সবাই মিলে মিশে থাকুন ইনসআললাহ রিজিক আল্লাহর হাতে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন