শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঢাকা-বরগুনা নৌরুটে শতাধিক ডুবোচর যোগাযোগ হুমকির মুখে

জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, বরগুনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বরগুনার সাথে রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ডুবোচরের কারণে প্রতিনিয়তই চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে বিষখালী নদীর ডুবোচরে ৪শ’ যাত্রীসহ আটকা পড়ে ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ এমভি পূবালী-১। উদ্ধারকারী লঞ্চ গিয়ে যাত্রীদের সে সময় তীরে নিয়ে আসে। ৪-৫ দিন চরে আটকে ছিল বিশালাকৃতির তিনতলা লঞ্চটি।
এর এক মাস আগে এই চরেই আরেকটি লঞ্চ আটকা পড়ে। সেটি উদ্ধারে সময় লাগে ১৫ দিন। পরপর দুটি দুর্ঘটনায় এই নৌপথের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দুর্ঘটনাকবলিত এমভি পূবালীর সুকানি ও লঞ্চের মাস্টারদের অভিযোগ, এতকিছুর পরেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে সঙ্কেত বাতির ব্যবস্থা করেননি। এ কারণে তারা লঞ্চ চালাতে ভয় পাচ্ছেন।
লঞ্চের সুকানি সেন্টু হাওলাদার জানান, অতি সতর্কতার সাথে এই রুটে লঞ্চ চালাতে হয়। বিষখালী নদীর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়ন এলাকা খুবই ভয়াবহ। এখানে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। কোনরকম মোড় ঘুরতে গেলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সম্প্রতি বিষখালীর চরপালট অংশে ডুবোচরে লঞ্চের ধাক্কা লাগে। এতে লঞ্চের ৯৮ ভাগ অংশ চরে উঠে যায়।
লঞ্চে কর্মরত আরেক সুকানি নাসির শেখ বলেন, ঢাকা থেকে প্রায় ৪শ’ যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাওয়ার পথে বিআইডব্লিউটিএর কোনো বয়াবাতি বা মার্কিং (নাব্য সংকেত) না থাকায় অতি সতর্কতার সাথে সামনে এগুতে হচ্ছিল। ওই রাতে প্রচুর বৃষ্টি ছিল, জোয়ারের পানিও ছিল বেশি। এ কারণে চরটির নিশানা বোঝা যাচ্ছিল না। মোড় ঘোরার সময় লঞ্চটি চরের ওপরে উঠে যায়।
পরে রাজারহাট-বি নামের আরেকটি লঞ্চ গিয়ে পূবালীতে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করে বরগুনায় পৌঁছে দেয়। পূবালী লঞ্চের মাস্টার জহিরুল ইসলাম জানান, বরিশালের পর বরগুনা পর্যন্ত ঝালকাঠির গাবখান মোহনা ছাড়া আর কোথাও নৌ-সঙ্কেত নেই। ভরা মৌসুমে এ রুটে লঞ্চ চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিআইডব্লিউটিএও নৌসঙ্কেতের জন্য কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
চরে আটকে যাওয়া পূবালী-১ চর থেকে লঞ্চটি নামানোর বিষয়ে লঞ্চের মালিক ইমরান খান রাসেল বলেন, চর থেকে লঞ্চ নামানো খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই আমরা বরিশাল নদীবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এখানে দ্রুত মার্কিং (নাব্য সঙ্কেত) স্থাপনের দাবি জানিয়েছি।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ ড্রাইভাররা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিষখালী নদীর ওখানে সিগন্যাল না থাকায় তাদের লঞ্চ চালাতে সমস্যা হচ্ছে।
সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনার বুক দিয়ে বহমান খাকদোন, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক ডুবোচরের কারণে তিনটি নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ, কার্গো, মাছধরা ট্রলার ও সমুদ্রগামী জাহাজ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। নাব্যতা সঙ্কট কাটানোর জন্য কালেভদ্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করলেও খননকৃত বালু পুনরায় নদীতে ফেলায় পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। ফলে চরম ঝুঁকি ও অতিরিক্ত সময় ব্যয়ে নৌ-যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বাড়ছে বরগুনার সাথে রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের রয়েছে চরম অসন্তোষ।
প্রমত্তা পায়রা ও বিষখালী প্রলয়ঙ্কারী সিডরের পর থেকেই নাব্যতা হারাতে থাকে। সিডরের সময় বঙ্গোপসাগরের তলদেশের বালু ওপরে চলে এসে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার পানি আছড়ে পরে সাগর উপকূলীয় আমতলী, বরগুনা ও পাথরঘাটার নদ-নদী, খাল-বিল, বিভিন্ন জনপদসহ ফসলি জমিতে। নদীর বুকে জমাট বাঁধে বিশাল বালির স্তুপ। এর ওপর ধীরে ধীরে পলি জমে বর্তমানে বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবো চরের সৃষ্টি হয়েছে। এ চরের কারণে অনেক জায়গায় নৌচলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমতলীর ফেরিঘাট এলাকায় অসংখ্য ডুবো চরের সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। ভাটার সময় প্রায় ২-৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘুরে ফেরি চলাচল করতে হয়। অনেক সময় চরে আটকে গিয়ে জোয়ারের জন্য ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন