শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নেছারাবাদে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার

দাপটে প্রাইভেট চালকরা

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দু’টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালককে পাওয়া দূরহ ব্যাপার বলে অভিযোগ রোগীদের। হাসপাতাল থেকে বরিশালে রেফার রোগীদের স্বজনরা তাকে ফোন দিলেই তিনি থাকেন পথে। কখনো বরিশালের গড়িয়ারপাড়, কখনো বা বরিশাল শেবাচিম মেডিকেলের সামনে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দাপটে থাকেন উপজেলা হাসপাতালের সামনে বসে থাকা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের চালকরা। তারা রোগীদের জিম্মি করে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া নিয়ে থাকেন। যা গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল পর্যন্ত এক হাজার টাকা করে ভাড়া থাকলেও প্রাইভেট চালকরা দিনের বেলা নিয়ে থাকেন ২২শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা। আর তাদের রাতের ভাড়া থাকে আরো ইচ্ছেমত। রাত যত গভীর হয় তাদের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও বাড়ে ততগুণ।
তবে প্রাইভেট চালকদের অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে সাফাই গেয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিম বলেন, প্রাইভেট চালকরা কখনোই অতিরিক্ত ভাড়া নেয় না। নিয়ে থাকলে আমি জিজ্ঞাসা করবো। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. ইব্রাহিম হোসেন প্রাইভেট চালকদের সাথে আঁতাত করে দিনে দু’টির বেশি ট্রিপ দিচ্ছেন না। এই সুযোগটা প্রাইভেট চালকরা ব্যবহার করে রোগীদের কাছ থেকে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া হাতিয়ে নেন। বিনিময়ে ইব্রাহিম পাচ্ছেন মোটা মাসোয়ারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিম।
উপজেলা সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তার অসুস্থ ফুপুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছিলেন।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার ফুপুকে রেফার নিয়ে বরিশাল শেবাচিমে যেতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিমকে ফোন দেন। ইব্রাহিম নাকি রোগী নিয়ে সে সময়ে বরিশালে ছিলেন। তখন হাসপাতালের সামনে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে কথা বলেন। তারা তার কাছে ২২শ’ টাকা ভাড়া দাবি করে। পরে তিনি পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলা থেকে ১৫শ’ টাকায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বরিশালে গিয়েছিলেন।
উপজেলার জগন্নাথকাঠি গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক তার ভাইকে গত দু’দিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সন্ধ্যার দিকে তার ভাইয়ের অবস্থা খারাপের দিকে যায়। ডাক্তার তাকে বরিশালে রেফার করেন। এসময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিমকে ফোন দেন। ইব্রাহিম জানান, তিনি রোগী নিয়ে গড়িয়ারপাড়। আসতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। তখন তারা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের সামনে থেকে ২২শ’ টাকায় একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বরিশালে যান।
গত দেড় মাস পূর্বে উপজেলার জগৎপট্টি গ্রামের আলী আকবর নামে এক ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হন। এসময় ডাক্তার তাকে দ্রুত বরিশালে নেওয়ার কথা বলেন। তাৎক্ষণিক সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিমকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি রোগী নিয়ে জম্বদ্বীপ পর্যন্ত আসছি। আসতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। ইব্রাহিম বলেন, আপনি বললে আমি একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দিতে পারি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ইব্রাহিম বলেন, হাসপাতালে দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে, ড্রাইভার আমি একা। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৭ জন রোগী বরিশালে রেফার হয়। আমি দুই থেকে তিনটির বেশি ট্রিপ মারতে পারি না। তাছাড়া আমি একজন সরকারি ড্রাইভার। আট ঘণ্টার বেশি আমার দায়িত্ব নয়।
নেছারাবাদ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রনি দত্ত বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালককে প্রয়োজনে কখনোই পাওয়া যায় না। ফোন দিলেই তিনি দূরে থাকেন। তিনি মন্তব্য করেন, ইচ্ছে করে দূরে থেকে তিনি বিনিময়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে হয়তো তিনি কোন সখ্যতা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কোন সখ্যতা নেই। তাছাড়া হাসপাতালে প্রাইভেট চালকদের এলাউ নেই। তবে প্রাইভেট চালকরা সুযোগ বুঝে রোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভাড়া নেন তা এক প্রকার গলা কাটার সামিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন