বগুড়ার শেরপুরে করোনা মহামারিতে গত ১৭ মাসে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বাল্য বিয়ে। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক হলেও অপেক্ষাকৃত নি¤œ আয়ের পরিবারের মেয়েরাই বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এছাড়া স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ইতোপূর্বে নিম্নহারে বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জ্যামিতিক হারে রেড়েছে এর সংখ্যা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে গড়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে শুধুমাত্র বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে, এমন অভিযোগ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
এ উপজেলায় ১টি জুনিয়রসহ মোট ৪৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে গড়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতকরা ৭৫ শতাংশ। অনুপস্থিতির একটি অংশ স্বেচ্ছায় লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। আরেকটি অংশ বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। সরেজমিন গাড়িদহ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছে। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মোট কত জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে তার সঠিক তথ্য নিরুপন না করায় জানানো সম্ভব হয়নি। উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জানান, পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় শিক্ষার্থীর করোনাকালীন বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে যা শিক্ষাখাতে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য আশঙ্কাজনক অবস্থা।
হাপুনিয়া মহাবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দানিসুর রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫০ জন ছাত্রী থেকে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীর বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। তাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আলম বলেন, ৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জন অনুপস্থিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কমপক্ষে গড়ে ২০ জন করে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। বিবাহিত শিক্ষার্থীর মধ্যে কদাচিৎ দু-একজন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত আছে বলেও জানান ওই শিক্ষক। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও একই চিত্র।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুল হক জানান, সবেমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এ মুহুর্তে ঝড়েপড়া কিংবা বাল্য বিয়ের সঠিক তথ্য আমাদের হাতে নেই। তবে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি আছে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন