পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ পাহাড় কেন্দ্রিক বনজ ও জুম অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দেশে সব ধরণের তামাকচাষে চাষিদের উৎসাহিত না করে তাদেরকে ফলজ গাছ ফলনে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন।
জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এক সময় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে দেখা যেতো তামাকের চাষ। সেই তামাক চাষকে হটিয়ে বর্তমানে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ভুট্টার আবাদ। কম খরচে অধিক লাভের বিষয়টি বোঝার পর থেকে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা।
এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এই সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৩৫.৩ শতাংশ। আর তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও মানিকছড়ি মানেই তামাকের চাষ। কিন্তু ধীরে ধীরে দীঘিনালায় তামাকের রাজ্যে বাড়ছে ভুট্টার চাষ। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর পরিবেশ নষ্টকারী তামাকের বিকল্প হিসাবে ২০১৮ সাল থেকে ভুট্টাচাষে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। একদিকে কৃষি বিভাগের প্রণোদনা অন্যদিকে তামাকের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ বাড়ছে।
দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অতীতে যেসব জমিতে ব্যাপকহারে তামাকের চাষ হতো এ বছর সেসব জমিতে উন্নতজাতের ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। তামাকের চেয়ে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার অসংখ্য কৃষক। তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় উর্বর জমিতে চাষ হচ্ছে তামাক। বহু ফসলি জমি চলে গেছে তামাক চাষের দখলে। এছাড়া তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার টন পাহাড়ি গাছপালা। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় প্রাণ-পরিবেশ। জেলার সচেতণ মহল দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও ফল মেলেনি কোন।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষযোগ্য সমতল ভূমি আছে মাত্র ৬ ভাগ। এরমধ্যে নদীর অববাহিকায় সমতলের উর্বর জমিতে একসময় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি আর ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কবলে পড়েছে এসব জমি। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাসহ দীঘিনালা, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে এই বিষবৃক্ষের চাষ হচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, সবজি বা অন্য ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আর বহুজাতিক ও দেশিয় তামাক কোম্পানিগুলোর নগদ অর্থের প্রলোভনে তামাক চাষের প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫ শতাধিক চুল্লিতে তামাক প্রক্রিয়াজাত করার কাজে প্রতিদিনই পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার টন পাহাড়ি গাছপালা। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পাহাড়ি এ জনপদের পরিবেশ জানান জেলা মার্কেটিং অফিসার তুষার কান্তি চাকমা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, তামাক চাষের ভয়াবহতার বিষয়ে কৃষকদের সচেতণ করার কাজ চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন