এলাকাবাসীর চাপের মুখে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের বৌলগ্রামের বৃদ্ধ খলিল শেখকে। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি নয় বলে খলিল দাবি করছেন। তিনি বললেন, ‘আমি পাগল না, আমাকে পাগল সাজানো হয়েছিল।’ গতকাল রোববার সকালে তার বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য দেন তিনি। গত ১০ সেপ্টেম্বর সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে মিলে নির্যাতন করে পাবনার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান। সেই সময়ে খলিল শেখকে নির্যাতন করে নিয়ে যাওয়ার ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। নির্যাতনের শিকার খলিল শেখ ওই গ্রামের মৃত নুরুউদ্দিন শেখের পুত্র। এ ব্যাপারে খলিল শেখ বলেন, ‘আমি কখনোই পাগল ছিলাম না। সম্পত্তির জন্য আমার স্ত্রী ও সন্তানরাই আমাকে কুকুরের মত বেঁধে পাগল সাজিয়ে পাবনা নিয়ে গেছে। আমি সুস্থ্য স্বাভাবিক একজন মানুষ। আমি হজ¦ করেছি। স্ত্রী ও সন্তানরা ভাবছে আমার সম্পত্তি আমি অন্য কারো নামে লিখে দিবো। সেটা তাদের ভুল ধারণা। এখন তাদের ধারণা পাল্টেছে, তাই বাড়িতে আনছে। আমি ওদের সাথেই থাকবো। ওদের ছাড়া আমার তো কেউ নাই।’
খলিল শেখ সাংবাদিকদের পেয়ে মনের আবেগ-অনুভ‚তি প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘আমি প্রায় ১২ বছর বিদেশ করে দেশে আসছি। আমার ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি ও একটি বিল্ডিং আছে। কিছুদিন পূর্বে একটি জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা পরিবারকে দিয়েছি। ওরা (স্ত্রী-সন্তান) আমার সব সম্পত্তি লিখে মাঝে মধ্যেই চাপ সৃষ্টি করছিল। রাজি না হওয়ায় আমাকে মারপিটসহ নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। কিন্ত আমি তাতে রাজি হয়নি। কারণ আমি মরে গেলে তো ওরাই এসব সম্পত্তির মালিক হবে। কেন আগে লিখো দিবো।’
খলিল শেখ পাবনার মানসিক হাসপাতালে নির্যাতনের শিকার হয় দাবি করে আরো বলেন, আমি পাবনা হাসপাতালেও নির্যাতনের শিকার হই। সেখানে নিয়ে যাবার সময় দুই জায়গায় পুলিশের পিকআপ দেখে চিৎকার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চিৎকার দিলে পুলিশ ওদের (স্ত্রী-সন্তানদের) ধরে আমার চোখের সামনে মারপিট করবে, এটা আমি সহ্য করতে পারবো না ভেবে চিৎকার দেইনি। এখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।’ এদিকে খলিল শেখের ছোট ছেলে আসিব শেখ বলেন, ‘আমার বাবা সুস্থ্য হওয়ায় পাবনা থেকে বাড়ীতে নিয়ে আসছি। সে এখন অনেকটাই সুস্থ্য। সে আমাদের সাথে বাড়িতে থাকবে। তাকে কেউ প্ররোচনা যাতে না দিতে পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখবো। আমার কাছের আত্মীয়-স্বজনরা তাকে দিয়ে সম্পত্তি লিখে নেয়ার চেষ্টাও করেছিল। কিন্ত তারা সফল হতে পারে নাই।’
তবে খলিল শেখের ছোট ভাই তারা মিয়া বলেন, ‘আমরা সম্পত্তি লিখে নিতে চাই নাই। বরং তার স্ত্রী-সন্তানরা মিলে আমার ভাইকে নির্মম নির্যাতন করে পাগল সাজিয়ে ছিল। এখন অন্তত বাড়িতে আনছে, এতেই আমরা খুশি।
এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, ‘নিখোঁজের বিষয় খলিল শেখের ছোট ভাই সাধারণ ডায়েরী করেছিল, সে এখন বাড়ীতে এসেছে। আর এসব বিষয় কিছু করার নেই। তবে খলিল শেখ যদি তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, তাহলে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন