সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন। যার কারণে মুহুরী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত বাড়ি, শতশত একর ফসলি জমি, মৎস্য খামারসহ কয়েকটি গ্রাম।
কৃষক রহিমুল্লাহ জানান, ত্রিশ বছরে এই নিয়ে তিনবার বসতভিটা পরিবর্তন করেছেন। ভাঙতে ভাঙতে এখন বেড়িবাঁধের পাশে এসেছে জোয়ার ভাটা না থাকলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এখানেও তৈরি হয়েছে ভাঙন। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও গবাদিপশু নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়। যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকিতে রয়েছে বেড়িবাঁধ ও চর কৃষ্ণজায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের শতশত ঘর বাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের সকল বাসিন্দাদের।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুর নবী বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। গত দুই বছর আগেও ভাঙন ঠেকাতে বালুবর্তি জিওবি ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় ভাঙন শুরু হওয়ায় আবারও ভাঙন প্রতিরোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বলু উত্তোলন করায় প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলে মুহুরী নদীর ভয়াল থাবায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের নদী পাড়ের ঘরবাড়ি। ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্তরা। নদী ভাঙন টেঠাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে উপজেলার চর সোনাপুর, চর কৃষ্ণজয়, চর লামছি, চর ডুব্বা, আদর্শগ্রাম ও বাদামতলীসহ আশ পাশের এলাকা ও পাউবোর বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
কবির আহমদ জানান, প্রভাবশালী কিছু লোক নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। বাড়িঘর, ফসলি জমি ও মৎস্য খামারের মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। ভাঙনে বাড়ি ও মৎস্য খামারের পাড়ে থাকা বিভিন্ন প্রকারের গাছপালা। বিবি আশেয়া নামে এক বাসিন্দা বলেন, তার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩৫ বছর। গত ৩০ বছর ধরে তিনি নদী ভাঙন দেখে আসছেন। এ পর্যন্ত তিনবার তাদের বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। গ্রামগুলোর প্রায় চার ভাগের দুইভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এখন আবার তাদের ৩২ শতকের বাড়ির প্রায় ২৮শ’ নদীতে চলে গেছে। ভাঙন বাড়ির উঠান পর্যন্ত চলে এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের মধ্যে উপজেলার চর কৃষ্ণজয়, চর লামছি, চর সোনাপুর ও চর ডুব্বা এলাকার ১০-১৫টি বাড়ির বসতভিটা, মাছের খামার নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বসতঘর বেড়িবাঁধের অপর পাশে সরিয়ে নিচ্ছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্রামের শতশত ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, বেড়িবাঁধসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বকুল আক্তার নামে এক নারী বলেন, শুকনো মৌসুমে ভাঙন তুলনামূলক কম থাকে। বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। গত দুই বছর আগে ভাঙন শুরু হলে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো হয়। এভাবে ভাঙনতে থাকলেও আমরা মাথাগুজানোর ঠায় পাবোনা। পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও রক্ষা করতে পারবো কিনা জানি না।
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম বলেন, মুহুরী নদী থেকে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি একাধিকবার লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিছেন। এভাবে চলতে থাকলেও সোনাগাজীর মানচিত্র থেকে হয়তো একদিন তার ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এম জহিরুল হায়াত বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, মুহুরী নদীর ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি লোকপাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ভাঙন ঠেকাতে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। এছাড়া মুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি অবগত নন। ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানবেন। যদি কেউ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন