শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাকে গুলি করে হত্যা: নেটিজেনদের উদ্বেগ

শাহেদ নুর | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৪৫ পিএম

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা ও শিক্ষক মুহিবুউল্লাহ। বুধবার রাত সাড়ে আটার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পের একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। অনতিবিলম্বে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্টির পলিটিক্যাল অ্যান্ড গভারমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ তার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নেতা মহিবুল্লাহ’র হত্যা একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটনা আগেও ঘটেছে, কিন্ত শরনার্থীদের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বে আসীন কোনও ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মোহাম্মদ ইউসুফের হত্যাকাণ্ডের পরে এই ধরণের বড় ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়না। হেড মাঝি আরিফ উল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিলো ঐ বছরের জুলাই মাসে। ২০১৯ সালে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে হত্যার ঘটনার পরে যে সব রোহিঙ্গা তরুণ পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা নূর মোহাম্মদ ছিলেন। শরনার্থী রোহিঙ্গাদের মধ্যে মহিবুল্লাহর প্রভাব ছিলো ব্যাপক, তিনি বহুল আলোচিতও বটে। ২০১৯ সালে হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাতের কারণে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন, অনেকে তাঁর সমালোচনাও করেছেন। মহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বিশাল সমাবেশের সংগঠক হিসেবে মহিবুল্লাহ বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ে কয়েক লাখ শরনার্থীর উপস্থিতি নিয়ে কোনও কোন মহলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো। সেই সময়ে এই ধরণের সমাবেশের ব্যাপার সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন ‘রোহিঙ্গারা আমাদের ‘রেড সিগন্যাল’ দেখিয়েছে’ (কালের কন্ঠ, ২৯ আগস্ট ২০১৯)। কোনও কোনও মহল থেকে সাম্প্রতিককালে বলা হচ্ছিলো যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’র উপস্থিতি আছে। সম্প্রতি ক্যাম্পে আরসা’র সদস্যদের উপস্থিতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো (সালিম সামাদ, ঢাকা ট্রিবিউন, ১৭ আগস্ট ২০২১)। এই কারনে পুলিশের অভিযান চালানো হয়েছিলো। যদিও ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতি নেই (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৮ আগস্ট ২০২০)। এখন মহিবুল্লাহ’র হত্যাকান্ডের পর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে আরসার দিকে ইঙ্গিত করছেন। কিন্ত এই ইঙ্গিত অন্য কিছুর ইঙ্গিত কীনা সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার। এই হত্যাকান্ড কেবল ক্যাম্পের নিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত নয়, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক বেশি। এর প্রতিক্রিয়া হবে বিভিন্ন ধরণের। এতে করে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ কতটা ক্ষুন্ন হবে, রোহিঙ্গাদের ভেতরকার শক্তিগুলোর কী ধরণের বিন্যাস ঘটবে এটা যেমন বিবেচ্য তেমনি বিবেচ্য হচ্ছে এই ঘটনার আগে-পরে রোহিঙ্গাদের বাইরের কোন শক্তি কী ধরনের আচরন করছে। মহিবুল্লাহ’র হত্যাকান্ডের জন্যে দায়ীদের খুঁজে বের করা জরুরি। অপরাধীদের শাস্তি প্রাপ্য। তাদের খুঁজে বের করা দরকার এই কারনেও যে, এই হত্যাকান্ডের কারন বোঝা দরকার, এর ব্যাপ্তিও বোঝা জরুরি। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য কী সেটা আগামীতে কী ঘটতে পারে তার ইঙ্গিত দেবে। কিন্ত এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা ক্যাম্পগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।’

সাংবাদিক ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘খুব ছোট কিন্তু পরিষ্কার করে একটি কথা বলে রাখি, যে কোন পন্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠান অতি দ্রুত, অন্যথায় তারা আপনাকে (বাংলাদেশীদের) ফেরত পাঠাবে। এটা অমোঘ সত্য!’

উদ্বেগ প্রকাশ করে শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মুহিবুল্লার ভূমিকা কি ছিলো? হত্যার পিছনে কোন আন্তর্জাতিক শক্তি কাজ করছে না তো? বাংলাদেশ সরকার যেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার না পাঠাতে পারে এমন কিছু? জাস্ট অনুমান।’

নিন্দা জানিয়ে নুরুল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গভীর তদন্ত চাই। একজন মজলুম জননেতাকে এভাবে হতো করা মেনে নেওয়া যায় না।’

শাস্তির দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ শাকিল খান লিখেছেন, ‘তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।’

রেজবুল হাসান মনে করেন, ‘বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমার এই ঘটনাতে জড়িত কিনা তা খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন