শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অর্ধেক কাজ করেই বন্ধ সেতু নির্মাণ

বিল অঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বর্ষা মৌসুমে বিল অঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার নিজ জেলা মাদারীপুরে চলবল এলাকায় ২০১২ সালে একটি সড়ক ও দুটি সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয় মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ টাকা। ২০১২ সালে দুটি সেতু ও একটি সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। সেতু দুটির নির্মাণকাজ অর্ধেক শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে। এরপরই এই প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতেই বিপত্তি ঘটে এই প্রকল্পটির। দুটি সেতুর কাজ নয় বছর বন্ধ হলেও আজও নির্মিত হয়নি সড়কটি। শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজও।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার থানার মোড় থেকে নবগ্রাম ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের একটি সড়ক ও দুটি সেতু ২০১২ সালে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে দুটি সেতুর নির্মাণকাজও শুরু করে সড়ক বিভাগ। সেতু দুটির নির্মাণকাজ অর্ধেক শেষ হয়। কোটালীপাড়ার রামশীল বাজার ও ডাসার থানা (দক্ষিণ ডাসার) শহরের সংযোগ সড়ক নামের এই প্রকল্পে দুটি সেতু নির্মাণে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৩০ শতাংশ দেখিয়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিল উঠিয়ে নেয় ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংগুইন ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেড। এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপরই এই প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতেই বিপত্তি ঘটে এই প্রকল্পটির। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক ও সেতু নির্মাণকাজ। স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক ও সেতু নির্মিত না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এই বিল অঞ্চলের ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। স্কুলগামী শিশু ও রোগীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। স্থানীয়রা এই বিল অঞ্চলের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সহজে যাতায়াতের জন্য সড়ক ও সেতু দুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক মোবারক হোসেন বলেন, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রী থাকাকালে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এই এলাকায় দুটি সেতু ও একটি সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে দুটি সেতু অর্ধেক কাজ শেষও করে। কিন্তু তিনি মন্ত্রিত্ব হারানোর পর বন্ধ হয়েছে এই সড়ক ও সেতুর নির্মাণকাজ। আমরা চাই বিল অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, এই সড়কটি দ্রুত নির্মাণ করে জনগণের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটাবে সরকার। স্থানীয় পীড়ারবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, সেতু ও সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় আমরা যেমনি সেতু ও সড়কে চলাচল থেকে বঞ্চিত হয়েছি তেমনি অর্ধেক কাজ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক জন মন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব চলে গেলে কাজ বন্ধ হবে কেন? কাজ তো তার নিজের গতিতে চলার কথা। তাহলে যোগাযোগ মন্ত্রাণালয় করে কী? চলবল এলাকার বাসিন্দা শাহআলম বলেন, দীর্ঘদিন আগে এই সড়ক ও সেতুর কাজ শুরু করলেও এখন কাজটি বন্ধ। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। সড়ক ও সেতু না থাকায় অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে দাবি, কোন অজুহাত নয় দ্রুত সড়ক ও সেতুর কাজটি শেষ কারার দাবি জানান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংগুইন ইনজিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কাজী তৌহিদুল আলম বলেন, আমরা প্রকল্পটির কাজের অর্ডার পেয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ৩০ ভাগ কাজ করার পরে হঠাৎ প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায় এবং আমরাও কাজ বন্ধ রাখি। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের আর অগ্রগতি হয়নি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কের দুটি সেতুর অর্ধেক কাজ শেষে অর্থ-সংক্রান্ত জটিলতায় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এখন নতুন করে এই সড়কটি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা যায়, সে জন্য সড়ক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন করে ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সাইট ভিজিটও করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন