শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নদী সীমানা সুরক্ষা করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার চারদিকের চারটি নদীর সীমানা নির্ধারণের পিলারগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরীতে সীমানা নির্ধারণে যে পরিমাণ পিলার স্থাপন করার কথা ছিল তা যেমন করা হয়নি, তেমিন স্থাপিত অনেক পিলারের অস্তিত্ব বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে, কোথাও পিলার আছে নদী নেই, আবার কোথাও নদী আছে পিলার নেই। বুড়িগঙ্গা-তুরাগের অধিকাংশ স্থানে দেখা গেছে পিলারের অনেক ভেতরে এসে নদী দখল করেছে স্থানীয়রা। পাশাপাশি প্রায় দু’হাজার ৭৮০টি পিলার এখন পর্যন্ত স্থাপিতই হয়নি। বলা হয়েছে, ঢাকা জেলার ৭টি মৌজায় সীমানা পিলার না থাকায় প্রভাবশালীরা ইচ্ছে মতো দখল করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নদ-নদী-খাল দখল ও দূষণকারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ঢাকার চারপাশের নদী খাল দ্রুত দূষণ ও দখলমুক্ত করাসহ খননের মাধ্যমে নৌপথ সচল রাখার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নৌপথ সচল করা হবে।
দেশের নদ-নদী সংরক্ষণে সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন থেকেই কথা-বার্তা বলা হচ্ছে। এমনকি এনিয়ে মন্ত্রী পরিষদেও আলোচনা হয়েছে। নদীতীর সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। নদীতীর সংরক্ষণের জন্য নেয়া প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রভাবশালীদের কারণেই নদী তীর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এখন দেখা যাচ্ছে, যতটুকু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ততটুকুও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এর কারণ দখল প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তারা প্রভাবশালী অথবা তাদের খুঁটির জোর রয়েছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও যথাযথ দেখভাল না হওয়ায় দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দখলদারদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তা প্রতিহত করতে না পারার বাস্তবতা থেকেই রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এটি একটি সাধুবাদযোগ্য উদ্যোগ। এজন্য একটি জাতীয় টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্সের অধীনে ২১ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান সমন্বয়কারির দায়িত্ব পেয়েছেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহমদ। এই টাস্কফোর্সের প্রধান রয়েছেন নৌমন্ত্রী। এই টাস্ক সদস্যরা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে নদী দখলের মহোৎসব স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছে। তারা সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে আশুলিয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ শেষে সেখানেই সাংবাদিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, বহুদিন ধরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্দোলন ও পত্র-পত্রিকার লেখালেখির পরও রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর রক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। এই যদি হয় পরিস্থিতি তাহলে সারাদেশের নদ-নদী দখলের চিত্র কি তা সহজেই অনুমেয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রতিবেশি কর্তৃক উজানে বাঁধের কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো শুষ্ক মওসুমে পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে । কমে যাচ্ছে নদীপথ যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনজীবন পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর। নদ-নদী স্রোতহীন হয়ে পড়ার কারণেই শিল্পবর্জ্য, পয়োঃবর্জ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের বর্জ্য জমে পানি দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে দখলদাররা গ্রাস করছে নদী। সে বিবেচনা থেকেই নদ-নদী সংরক্ষণের বিষয়টি অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশের পরিবেশবিজ্ঞানীসহ সকল সচেতন মহলই নদ-নদী সংরক্ষণে আপোসহীন থাকার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছে। বাস্তবে পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি।
শুধু রাজধানী নয় সারাদেশের নদীগুলো সংরক্ষণ এবং এসবের পানি দূষণমুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। নদীগুলো নাব্য থাকলে নৌপথও সচল থাকে। পণ্য পরিবহনের খরচও কমে আসবে। নদীকেন্দ্রীক জীবন জীবিকাও রক্ষা পাবে। দেশের মৎস্য সম্পদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো নাব্য থাকলে ও নৌপথ চালু রাখা গেলে রাজধানীতে দূষণ যানজটের অনেকখানি অবসান হবে। বলা বাহুল্য, নদী না বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে না। পরিবেশ না বাঁচলে মানুষের অবস্থাও বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই কালবিলম্ব না করে দূষণ রোধে এবং নদী তীর সংরক্ষণে দখলমুক্তকরণে টাস্কফোর্সের সফল হওয়ার বিকল্প নেই। কেবল রাজধানীতেই নয় সারাদেশের নদ-নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন