ইসলামোফোবিয়া (Islamophobia) শব্দটির যুৎসই বাংলা প্রতিশব্দ: ‘ইসলাম আতঙ্ক’। British Runnymede Trust ইসলামোফোবিয়ার সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে: Dread or hatred of Islam and therefore, to the fear and dislike of all Muslims. মার্কিন লেখক Stephen Schwartz-এর মতে, ইসলামোফোবিয়া হচ্ছে:... the condemnation of the entirety of Islam and its history as extremist. কমিউনিজমের পতনের পর পাশ্চাত্যবাদ ও পুঁজিবাদ ইসলামকে অমোঘ শত্রু বা টার্গেট বিবেচনা করে ইসলামকে দমিয়ে রাখতে ও কালিমালিপ্ত করতে বেশ কিছু কনসেপ্ট সামনে নিয়ে আসে। এগুলো হচ্ছে: ইসলামোফোবিয়া, ফান্ডামেন্টালিজম, টেররিজম, ওয়্যার এগেইনেস্ট টেররিজম প্রভৃতি।
এর মধ্যে ইসলামোফোবিয়া কনসেপ্টকে ব্যবহার করা হয় ইসলামকে দমিয়ে রাখতে, ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে এবং ইসলামকে মসিলিপ্ত করতে। এ ছাড়াও এর একটি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। সেটা হলো, মুসলিম বিশ্বের কাছে থাকা সম্পদ। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ হস্তগত করা।
পাশ্চাত্যবাদের উদ্দাম ভোগ বিলাসে ক্লান্ত মানুষ, বস্তুবাদের অসারতায় উদ্ভ্রান্ত ও দিশেহারা মানুষ যখন শৃঙ্খলা, সংহতি ও শান্তির সন্ধানে পথ খুঁজছে তখনই ইসলাম তাদের সামনে সকল প্রশ্নের সমাধান হয়ে উপস্থিত হয়েছে। ফলে বিজ্ঞান, জড়বাদ ও যুক্তির প্রাবল্যের মধ্যেও ইসলাম আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে পাশ্চাত্যর দেশে দেশে ক্রমবিস্তার লাভ করছে, যা প্রতিপক্ষকে শঙ্কিত করে তুলছে। ফলে পাশ্চাত্যের মানুষের কাছে ইসলামের একটি ভয়ঙ্কর চেহারা দাঁড় করানো এবং পরিকল্পিতভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা অনেকদিন ধরে চলছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামোফোবিয়া কনসেপ্ট বিশেষভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এ কনসেপ্টকে ছড়িয়ে দেয়া ও প্রতিষ্ঠার জন্য পাশ্চাত্য তার শক্তিশালী গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পুস্তক, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ইত্যাদিকে ব্যবহার করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কমন টার্গেট হওয়ায় ইসলামের অন্যান্য প্রতিপক্ষ যেমন ইহুদিবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ প্রভৃতি এই কনসেপ্ট লুফে নিয়েছে এবং সকলে মিলে সম্মিলিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার তথা ইসলামফোবিয়াকে প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ধদিন ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এমনকি ভিডিয়ো গেমের মাধ্যমে বাচ্চাদের মনজগতেও ঢোকানো হচ্ছে ইসলাম একটি ভয়ঙ্কর ধর্ম, এর অনুসারী মুসলিম মাত্রই জঙ্গী, তাদেরকে খতম করাই বীরধর্ম।
বলাবাহুল্য, মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য, পাশ্চাত্যের লেজুড়বৃত্তি, প্রকৃত ইসলামী চেতনায় ভাস্বর নেতৃত্বের অভাব, গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতা এবং শক্তিশালী গণমাধ্যমের অনুপস্থিতি ইত্যাদি ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো খুব সহজেই বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে। এই ইসলামফোবিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিচক্র ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো দেশগুলো কার্যত ধংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ইরান, পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, কাতার প্রভৃতি দেশকে নানা ইস্যু তুলে দমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এশিয়া মহাদেশে ইসলামোফোবিয়া প্রচারে ভারত ও ইসরাইল অত্যন্ত সক্রিয়। ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী ও ইসরাইলি জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী বিশ্বে ইসলামের একটি ভয়ঙ্কর রূপ প্রচার করার জন্য সদা তৎপর। উপমহাদেশে ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী একযোগে ইসলামোফোবিয়া প্রচারে অকুণ্ঠ। হলিউডের অনুকরণে বলিউড থেকে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা, এমনকি কোলকাতার চলচ্চিত্রেও ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা অত্যন্ত সুকৌশলে করা হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স বাংলাদেশ নিয়ে যে সিনেমা বানিয়েছে তাতেই বাংলাদেশকে একটি অনিরাপদ দেশ হিসেবে প্রচার করেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় কলকাতার সিনেমা ‘শেষ থেকে শুরু’ দেখলাম। সিনেমাতে দেখানো হয়েছে, পুরান ঢাকার অধিবাসীরা এলএমজি, এসএমজি নিয়ে খায়, ঘুমায়, বেড়াতে যায়। যখন ইচ্ছা বন্দুকযুদ্ধ শুরু করে। এটা সত্য নয়। অথচ, তা দেখানো হয়েছে। ভারতে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর বৈষম্য ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চললেও সেখানকার গণমাধ্যমে তার ছিঁটেফোঁটও প্রতিফলিত হয় না।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের দরং জেলায় উচ্ছেদ অভিযানের পর আশ্রয়চ্যুতদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। একটি সুবিশাল শিবমন্দির নির্মাণের জন্য হাজার হাজার বাঙালি মুসলিমকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার পর সেই আশ্রয়চ্যুতদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালায়। বিবিসি জানিয়েছে, পুলিশের গুলিতে অন্তত দুজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
বস্তুত আসামের দরং জেলার ধলপুর হিলস ও সিপাহঝাড় এলাকায় প্রায় ৭৭ হাজার বিঘা জমি দখল করে বিশাল একটি শিবমন্দির কমপ্লেক্স বানানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরে। সেই অভিযানের সর্বশেষ ধাপে গত ২০ সেপ্টেম্বর দরং জেলার ধলপুরের গরুখুঁটি এলাকার আটশো পরিবারের কয়েক হাজার মানুষকে তাদের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে সেই জমি খালি করা হয়। তার প্রতিবাদে ২৩ সেপ্টেম্বর দরংয়ে উচ্ছেদ-বিরোধী কমিটির জমায়েতে পুলিশ গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং রাজ্যের শাসকদল বিজেপি’র অভিযোগ, কয়েকশো ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ওই এলাকায় অনেক জমি জবরদখল করেছে। তাঁদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। ১১ জন আহত পুলিশকর্মী এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। পুলিশ সুপার সুশান্ত বলেন, ‘লাঠি এবং ধারাল অস্ত্র নিয়ে পুলিশকর্মীদের আঘাত করেছে জবরদখলকারীরা’। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, চর অঞ্চলগুলিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে মুক্ত করার এই অভিযান চলবে। ঘটনার পর তিনি জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীরা আচমকাই পুলিশের উপরে হামলা চালায়। বিভিন্ন ছোটখাটো অস্ত্র ও ইটবৃষ্টির মাধ্যমে আঘাত করা হয়। কার্যত প্রাণে বাঁচতেই পুলিশ পালটা গুলি চালিয়েছে।
এদিকে আসামের দরং জেলায় পুলিশের গুলিতে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভার সাংসদ রিপুন বরার নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, অবিলম্বে দরংয়ের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও তুলেছেন। ঘটনাচক্রে, দরংয়ের পুলিশ সুপার সুশান্ত বিশ্বশর্মা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ভাই।
এতো বড় ঘটনা ভারতীয় গণমাধ্যমে ঠাঁই পেয়েছে খুবই গুরুত্বহীনভাবে। একমাত্র বিবিসির বরাতে মানুষ সঠিক ঘটনা জানতে পেরেছে, বিবিসির সাংবাদিক দেবব্রত দত্ত ঘটনাস্থল ঘুরে এসে জানিয়েছেন, ‘এই উচ্ছেদ হওয়া মানুষরা প্রায় সবাই বাঙালি মুসলিম, যারা বহু দশক ধরে ধলপুরের চরাঞ্চলেই বসবাস করছেন। রহিমা শেখ নামে সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নদীর বুকেই বারবার ঘর বাঁধি আর সেই নদীর বুক থেকেই বারবার আমাদের খ্যাদায়ে দেয়। অথচ, আমাদের কাগজপাতি সব আছে- এনআরসি, প্যান কার্ড। নিজেরা খাই বা না-খাই সরকারি খাজনা ঠিকই দিয়ে যাচ্ছি।’ তার ভাষায়, ‘সেই ১৯৮৩ সালেরও কত আগে থেকে আমরা এখানে থাকতেছি। তহন এইহানে মন্দির-টন্দির কিসুই আসিল না, ছোট্ট একটা পাহাড় আসিল শুধু!’
পাশ থেকে জাহানারা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘রাত জেগে আমরা ঘর বানায়ছিলাম। আমরা দুখিয়া মানুষ ... এখন মন্দিরের দাবি কইর্যা আমাগো খ্যাদায় দিল। এদিকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সেলের নেতা নিয়ামত শেখ বা জাহাঙ্গীর আলমরাও জানাচ্ছেন, তারা প্রত্যেকে দেশের বৈধ নাগরিক ও বহু বছর ধরে সরকারি খাজনা দিয়ে আসছেন ... তারপরেও তারা বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার।
নিয়ামত শেখ যেমন নিজের দাবির স্বপক্ষে ২৬ আগস্ট, ১৯৮৪ তারিখে দেওয়া একটি খাজনার রসিদও তুলে ধরেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উচ্ছেদ হওয়া প্রত্যেকের এনআরসিতে নাম আছে। লিগ্যাসি ডেটা আছে। এই অঞ্চলে বহু সরকারি প্রাথমিক স্কুল আছে- অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। তারপরেও কীভাবে আমরা অবৈধ হই? এ ঘটনায় দুটি মসজিদও ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু লোককে একটি ভাঙা মসজিদের কাছে বসে বিকেলে জুমার নামাজ পড়তে দেখা গেছে।
সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা গিয়েছে, পুলিশ খুব কাছে থেকে লাঠি হাতে থাকা ব্যক্তির পায়ে গুলি করলে তিনি পড়ে যান, এসময় পুলিশ খুব কাছে থেকে তার বুকে গুলি করে। এতেও যেন তাদের ক্রোধ মিটছিলো না কিছুতেই। নিহত ব্যক্তির উপর পুলিশ লাঠি দিয়ে আঘাত করছিলো। এতেও শেষ হয়নি। পুলিশের সাথে থাকা এক ফটো সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে মরে পড়ে থাকা ব্যক্তির উপর ছুটে এসে লাথি, ঘুষি মারতে থাকেন, বারবার তার উপর লাফিয়ে আঘাত করতে থাকেন। কয়েক জন পুলিশ তাকে টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে লাথি, ঘুষি মেরেই চলেন তিনি। তবে পুলিশ সেসময় উক্ত ব্যক্তিকে আটকের কোনো চেষ্টাই করেনি। এ ভিডিয়ো ব্যাপক ভাইরাল হলে রাজ্য সরকার বেকায়দায় পড়ে যায়। সমালোচনা থেকে রক্ষা পেতে মারাত্মক হামলার নেতৃত্বদানকারী ক্যামেরাম্যানকেও গ্রেপ্তার করে স্থানীয় আদালত তাকে ১৪ দিনের বিচারিক রিমান্ডে পাঠায়। ধৃত ওই ব্যক্তির নাম বিজয় শঙ্কর বানিয়া, পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। আসাম সরকার কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযান নথিভুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন নিয়োগ করেছিল তাকে। পরে এ সহিংসতার ঘটনায় হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
দৈনিক যুগশঙ্খের এক খবরে বলা হয়, ‘উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করছে। তাদের পূর্বপুরুষদের নাম ১৯৬৬ বা তার আগের ভোটার তালিকায় আছে। সকলের নাম এনআরসি তালিকায় সন্নিবিষ্ট হয়েছে। কিন্তু বিজেপি সরকার তাদেরকে রোহিঙ্গা তকমা সেঁটে দিচ্ছে। এর আগের সপ্তাহে শোনিতপুর জেলার প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার উচ্ছেদ করে তাদেরকে বাংলাদেশি তকমা দেন বিজেপির নেতারা। হোজাই জেলায় কয়েকটি পরিবার উচ্ছেদ করে একই রকম মিথ্যা প্রচার করছে বিজেপি।
পত্রিকাটি জানায়, রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেস ও এআইইউপিএফ জোট নেতারা বলছেন, নির্বাচনের পর প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। কাউকে ব্যবসায় বাধা দিচ্ছে, কাউকে উচ্ছেদ করছে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিচ্ছে শাসক দলের কর্মীরা। কোর্টের নির্দেশ মতো উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ না করলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী জোটের নেতারা। এছাড়া, যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
আসামের এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আরএসএস, শিবসেনা ও হিন্দু মহাসভা সমর্থিত বিজেপি নেতৃত্বাধীন সমগ্র ভারতে চলা মুসলিম বিদ্বেষ ও নির্যাতনের এটি একটি খন্ডচিত্র মাত্র। ভারতীয় গণমাধ্যমে এসবের সামান্যই প্রকাশ পায়। যতোটুকু প্রকাশ পায় তাও আবার তথাকথিত সাংবাদিকদের সম্পাদনায় ফেব্রিকেটেড হয়ে প্রকাশিত হয়। শুধু ভারতীয় গণমাধ্যম নয়, পাশ্চাত্যের শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোতেও এসব সংবাদের খুব কম অংশই উঠে আসে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনেকটাই পাশ কাটিয়ে যায়। অথচ, ঠুনকো অজুহাতে মুসলিম দেশগুলোকে বয়কট করে। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর বয়কট করলো নিরাপত্তার অজুহাত তুলে। এর জবাব দিতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার উসমান খাজা বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, খেলোয়াড় ও বোর্ডগুলোর পাকিস্তানকে না বলাটা খুবই সহজ। কারণ, দেশটার নাম পাকিস্তান। আমার ধারণা, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনই হয়। তবে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কেউই ভারতকে না বলবে না।
ইসলামোফোবিয়ার সফলতা এখানেই। মুসলমানদের ক্ষেত্রে তকমা লাগিয়ে দেয়া খুব সহজ। এক্ষেত্রেও সে কাজটি করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। তার দাবি, Popular Front of India (PFI) নামে একটি উগ্র ইসলামিক দলই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তার পুলিশ আরো এককাঠি এগিয়ে নিহত ব্যক্তিদের গায়ে বোরো জঙ্গীর তকমা লাগিয়েছে। পুলিশের দাবি, ‘গুলির লড়াইয়ে ওই দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। যে দু’জন জঙ্গি মারা গিয়েছে তারা নতুন গজিয়ে ওঠা United Liberation of Bodoland (ULB)র সদস্য ছিল বলে খবর মিলেছে।
মুসলমানদের উপর পরিচালিত নির্যাতন-নিষ্পেষণ বৈধ করার সহজ উপায় হলো, জঙ্গী তকমা এঁটে দেয়া। কাবুল বিমানবন্দরে জঙ্গী সংগঠন আইএসের হামলার খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে বিশ্বের তাবড় গণমাধ্যমে। কিন্তু প্রতিশোধের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিরীহ নাগরিকদের বোমা মেরে হত্যা করাকে জঙ্গীদের কাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়নি। এহেন অবস্থা থেকে বেরুতে মুসলমানদের মধ্যে শক্তিশালী মিডিয়া সৃষ্টি এবং ঐক্যের বিকল্প নেই।
palash74@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন