দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি যুব জনগোষ্ঠীকে দক্ষতা প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অধিকতর সচেতন ও দক্ষতা প্রশিক্ষণকে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) আয়োজিত “স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (০৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) -এর মাল্টি পারপাস হলে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ সায়েম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকি।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মো. নূরুল আমিন। এসময় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, শিল্প দক্ষতা পরিষদের প্রতিনিধি এবং দক্ষতা উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মূল প্রবন্ধে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৬.৯ কোটি মানুষ বসবাস করে যার মধ্যে ৭০% মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বর্তমানে ১২.৩%। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৮-৩৫ বছর বয়েসী জনসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটি। তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক যুব জনগোষ্ঠীকে দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন পলিসি প্রণয়নে সরকারকে সহযোগিতার জন্য ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।
সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকাসহ প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে হলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রায় ২২ লক্ষ যুব যুক্ত হচ্ছে। তাই Demographic Dividend-এর সুযোগ কাজে লাগানোর এখনই প্রকৃত সময়। কর্মক্ষম জনবলকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে একদিকে উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে দক্ষ জনবল বিদেশে প্রেরণের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সহজতর হবে।
তিনি আরও উল্লেখ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ সময় ধরে যুবসমাজের একটি অংশ প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আরেকটি অংশ কাজ হারিয়েছে। অস্বাভাবিক এ সময়ে পেশার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন মানুষ ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্ম-নির্ভর হয়েছে। বাংলাদেশে এই বিষয়টি অভাবনীয় আশার সঞ্চার করেছে। ফ্রি-ল্যান্সিং-এর মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে সামাজিক ও পেশাগত পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রচলিত প্রশিক্ষণ কোর্সের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আধুনিক ও আগামীর প্রযুক্তির চিন্তা মাথায় রেখে স্ট্যান্ডার্ড ও প্রশিক্ষণ কারিকুলাম প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ভিশন-২১ এখন বাস্তব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ করে গড়ে তোলা অতীব প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩১, এসডিজি-২০৩০, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নসহ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ফেব্রুয়ারি’১৯ হতে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের দক্ষতা উন্নয়নের চিত্রটি খুব আশাপ্রদ নয়। শ্রমশক্তি জরীপে ২০১৬-২০১৭ অনুযায়ী শ্রমশক্তির ৮৫.১%অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সাথে সম্পৃক্ত এবং এর মধ্যে ৩৯.৯% কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অন্য দিকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ২৯.৮% এর কোন ধরনের শিক্ষা, শ্রম বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নয় (NEET); তাই বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বল্প শিক্ষিত শ্রমজীবী মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তোলা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন