ভাঙারাস্তা, গর্ত, কাদা পানি, বৃষ্টিতে হাটুপানি, সড়কের উপরে ময়লা আবর্জনা, রাস্তায় ড্রেনের পানি জীবন বিষিয়ে তুলেছে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। অলিগলিসহ ৯০ শতাংশ রাস্তাই নষ্ট এই ওয়ার্ডের। বৃষ্টি আসলেই বেশিভাগ সড়ক ডুবে যায় পানিতে। ঢাকা শহর হলেও এখানে রয়েছে ইটের রাস্তা। কিছু রাস্তা রয়েছে যার অবস্থা এতোটাই খারাপ যে রিকশা চালকরাও যায় না। নেই বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন। রাত হলেই নেমে আসে অন্ধকার, নেই কোন সড়ক বাতি। ওয়ার্ডবাসী বলছেন, এই এলাকাকে ঢাকা শহর বলা চলে না, গ্রামও এখন অনেক উন্নত, বাড়ির সামনের রাস্তা পাকা করা। ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশন হওয়ার সময় এলাকাবাসী মনে করেছিল উন্নয়ন হবে, নাগরিক সুবিধা পাবেন। কিন্তু হয়নি উন্নয়ন, দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ। এলাকাবাসী নিজেরা টাকা তুলে অনেক রাস্তার সংস্কার কাজ করিয়েছেন। এ বিষয়ে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শোনালেন তার অপারগতার কথা। বললেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ড নিয়ে হওয়া মেগা প্রকল্প শুরু না হলে সমস্যার কোন সমাধান নেই। নিয়মিত কোন উন্নয়ন বা বরাদ্ধ কিছুই পান না তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নং ওয়ার্ডের চিত্র এমনই। ২০১৭ সালের ৩০শে জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশন লাগোয়া হরিরামপুর ইউনিয়নের রোশাদিয়া, কালিয়ারটেক, খায়েরটেক, কামারপাড়া, ভাটুলিয়া, নয়ানীচালা, রাজাবাড়ী, ধউর, আশুতিয়া, রানাভোলা নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নং ওয়ার্ড। জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন সময়ে ঢাকা-১৮ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের দ্বন্দ্বের কারণে এলাকায় তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এমপি কোন কাজে ডিও লেটার দিতেন না। সিটি করপোরেশন হবার পর ২ বছর উন্নয়ন বন্ধ ছিল। নতুন ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচনের পর সামান্য কিছু কাজ হয়েছে।
সরজমিনে ডিএনসিসি ৫৪নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, এখানকার বাসিন্দারের চলাচলের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গলিপথেরও বেহাল দশা। কামারপাড়া নতুন বাজার থেকে শাপলার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি ঢালাই করা। এছাড়া কবরস্থান এলাকার রাস্তা পাকা করা। বেশিভাগ সড়ক ইটের তৈরি। কোথাও কোথাও গ্রামীন কাঁচা রাস্তা। বড় বড় গর্ত। পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে কদমাক্ত পানিতে নেমে রিকশা ঠেলে নিচ্ছেন। সরু সড়কের কারণে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার তেমন একটা এলাকার মধ্যে ঢুকতে পারছে না। নির্মানধীণ সামগ্রী নিয়ে ছোট ছোট মালবাহী পিকআপ ভ্যান ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে রিকসা চলাচল।
৫৪ নং ওয়ার্ডের ব্যস্ততম স্থান কামারপাড়া পুরাতন বাজার। বাজারের উপর জমে আছে পানি। হাজারো গর্তে পড়ে আছে নানা বর্জ্য। রাজাবাড়ি এলাকার মেডিকেল সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত এই পথে। বৃষ্টি আসলে ডুবে যায় পুরো সড়কসহ আশেপাশের কয়েক শতাধিক বাড়ি ঘর। মানুষ কোমর পানিতে নেমে যাতায়াত করেন। দীর্ঘ দিনেও সড়ক ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় অনেকেই নিজস্ব উদ্যোগে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।
রাজাবাড়ির দোকানদার আব্দুল হক বলেন, বৃষ্টি হলে এখানে হাটু পানি জমে যায়। তিনি বলেন, সামনেই মেডিকেল রোড এই রোডে কোন রিকশা চলে না। কামারপাড়া স্কুল এন্ড কলেজের সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, গত ৪/৫ বছরে এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। বাজারের সামনে সব সময় পানি জমে থাকে। বৃষ্টি হলে স্কুলের সামনে হাটু পানি জমে যায়। খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঈদগাহ, শিশু পার্ক কিছুই নেই। জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নং ওয়ার্ডে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছেন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে নতুন বসতি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হচ্ছে ছোট বড় স্থাপনা। এতে সংকুচিত হয়ে আসছে সড়ক। এদিকে নতুন ওয়ার্ডগুলোকে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করলেও অঞ্চলগুলোতে নেই নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবল। নেই আঞ্চলিক অফিস। কাউন্সিলর অফিসে দেয়া হয়নি সচিব, নেই গোডাউন। মশা মারার ঔষুধসহ যাবতীয় জিনিস নিজ খরচে গোডাউন ভাড়া করে সেখানে রাখেন কাউন্সিলর।
৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ ইনকিলাবকে বলেন, সিটি করপোরেশনে এই এলাকাটি অন্তভ‚ক্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন মামলার কারণে এলাকায় কাজ হয়নি। কাউন্সিলর হওয়ার আগে আমি এখানকার মেম্বার ছিলাম। তবে ২০১৬ সালের পর মামলা সংক্রান্ত কারণে এলাকায় কোন কাজ করতে পারি নাই। আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ পেয়েছি। দ্বিতীয় বার নির্বাচনের পর মেয়রের স্পেশাল বরাদ্ধ থেকে আরো ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকায় রাস্তার একটা প্রকল্প পাশ করিয়েছি। ইত্যোমধ্যে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে অর্থ বেড়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। কিছু রাস্তার কাজ নিজের খরচে করিয়েছি। ইতোমধ্যে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মেগা প্রকল্পতে এই এলাকার ৯৫ শতাংশ রাস্তা অন্তভর্‚ক্ত করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের কারণে অন্যান্য নিয়মিত উন্নয়ন কাজ বন্ধ। নিয়মিত বরাদ্ধের টাকাও মেগা প্রকল্পে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডবাসী নিয়মিত তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। ব্যক্তিগত খরচে কিছু সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। কিন্তু দুর্ভোগের তো শেষ নাই। প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৪ই জুলাই একনেক সভায় নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। গত বছরের কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তবে এক বছরের অধিক সময়েও নতুন ওয়ার্ডে দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু করতে পারেনি ডিএনসিসি। যদিও ডিএনসিসি বলছে, একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্পের টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় না হওয়ায় উন্নয়ন শুরু করতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ফলে সহসাই এসব ওয়ার্ডের উন্নয়ন হচ্ছে না। ডিএনসিসি সূত্রে আরো জানা যায়, আগামী মাসে ১১০ কোটি টাকার কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা হবে। এতে সব কয়টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম তরান্বিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন