লাবণ্য আহমদ। বয়স সাইত্রিশ। একজন গণমাধ্যম কর্মী। ওজন ৯৫ কেজি। শরীরের অরিরিক্ত ওজনের জন্য স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না। একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠেন। পছন্দের পোশাক পরতে পারেন না। এ বয়সেই নানা রোগ-ব্যাধি শরীরে বাসা বেঁধেছে। এমন আরো অনেক সমস্যায় আছেন শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ে। শুধু লাবণ্য একা নন, দেহের অতিরিক্ত মেদ ভুঁড়ি ও বেশি ওজনের নারী-পুরুষদের হরহামেশাই নানা সম্যসায় পড়তে দেখা যায়।
স্লিম ইজ স্মার্ট। শরীরের বাড়তি ওজন মানেই একটা বাড়তি টেনশন। শরীরের বাড়তি মেদ কে রাখতে চায়? মোটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে কিংবা ভুঁড়ি কমাতে যুগ যুগ ধরে সচেতন মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কখনও না খেয়ে ডায়েট অনুসরণ করা, কিংবা সকালে-বিকালে নানা ধরনের ব্যায়াম করা, কিংবা ঘাম ঝরিয়ে চর্বি গলিয়ে হাজারো নিয়মকানুন মেনে চলা। কষ্টের আর শেষ নেই। এছাড়াও বাড়তি ওজনের মানুষেরা থাকেন অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। পানীয় নিয়মিত খেলেও কিন্তু ওজন কমতে পারে। ওজন কমাতে কার্যকর উপাদান হলো পানি। শুধু পানি খেতে ভালো না লাগলে পানির সাথে অল্প লেবু বা শসা কিংবা টমেটোও যোগ করে নিতে পারেন। এতে বেশি ক্যালোরি যেমন যোগ হবে না, তেমনি অন্যরকম একটা ফ্লেভারও পাবেন।
ওজন কমাতে বিভিন্ন তরিতরকারি কিংবা সবজির শরবত বা জুস পান করা বেশ ভালো একটি উপায়। কিন্তু এই জুসে একদিকে যেমন আঁশ থাকে, তেমনি উল্লে¬খযোগ্য পরিমাণে থাকে বিভিন্ন পুষ্টির সমাহারও। শরীরের জ্বালানি হিসেবে এই উপাদানগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে কম পরিমাণ সোডিয়াম পাবেন, যা আপনার জন্য উপকারী।
ফুড প্লানিং এন্ড মনিটরিং ইউনিটের সহযোগি গবেষণা পরিচালক মোস্তফা ফারুক আল বান্না বলেন, চিনিমুক্ত চা, বিশেষ করে সবুজ চা শরীরকে সজীব করে তোলে। এটি শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি চাঙা করে তোলে, ফলে আপনি পাবেন বেশ ঝরঝরে একটা অনুভূতি। ওজন কমানোর জন্য বেশিরভাগ মানুষ চিন্তিত থাকেন। কী করলে ওজন কমবে, কীভাবে চললে একটু কম মোটা দেখাবে, কী কী না খেলে ওজন কমবে, আরও কত কি! ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক কাজ করে থাকেন ওজন কমানোর জন্য। অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলেন। কারণ একটাই, ওজন কমানোর উপায় বের করতে হবে। খাওয়া শুরু করার আগে ১/২ গ¬াস পানি খেয়ে নিন। এতে পেট ভর্তি থাকবে। খাবার কম খাবেন ফলে ওজন কমবে। খাওয়ার মাঝে পানি খাবেন না। খাওয়ার মাঝে পানি খেলে হজমের প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়। হজম ভালো না হলে ওজন বাড়ার সমস্যায় পড়বেন। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খান। বেশি সময় নিয়ে খেলে ক্ষুধা কমে যায়। ফলে কম খাওয়া হয়। একবারে বেশি খাবার খাবেন না। একবারে বেশি খেলে শরীরে দ্রুত চর্বি জমে, কেননা খাবার হজম হয় না ভালোভাবে। অল্প পরিমাণে খাবার ৪/৫ বেলা খাবেন সারা দিনে। খাবার সময় কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ ভাত/রুটি কম খাবেন। সবজির পরিমাণ বেশি রাখুন। নাস্ত খাবার সময় ফল খান, তেলে ভাজা খাবার বাদ দিন। কিছু অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুললে আমরা মুক্তি পেতে পারি ওজনের সমস্যা থেকে। অবাক হলেও সত্যি আমাদের এই অভ্যাসগুলো দূর করবে দেহের মেদ। ফাইবার আমাদের দেহের বাড়তি সব ধরনের খাদ্য উপাদান শুষে নেয়ার কাজ করে যা দেহে মেদ হিসেবে জমত। খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ালে দেহে মেদ জমতে পারে না। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, ভুট্টা, কমলালেবু জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। খাদ্য তালিকায় এই ধরনের খাবারের মাত্রা বাড়ান। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ডিম রাখার অভ্যাস করুন। ডিম ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী একটি খাবার। ডিম প্রোটিনের বেশ ভালো একটি উৎস যা অনেকটা সময় ধরে আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। ফলে কম খাওয়া হয়। এতে ওজন কমে। ভিটামিন ডি ওজন কমানোর বেশ ভালো একটি উপাদান। সকালের রোদ দেহে ভিটামিন ডি সরবরাহ করে যা দেহে জমে থাকা মেদ দূর করতে সাহায্য করে। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠে রোদের আলোয় বের হওয়ার অভ্যাস করুন। ওজন কমানোর জন্য ঘুমের প্রয়োজন অনেক বেশি। বেশি ঘুমুলে যেমন ওজন বাড়ে ঠিক তেমনই কম ঘুমালেও ওজন বাড়ে। তাই প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস ওজন বাড়তে বাধা প্রদান করে। অনেকেই টিভির সামনে বসে খান যা ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। এর কারণ হলো টিভির সামনে বসে খাওয়া শুরু করলে খাবারের কোনো হিসাব থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই খাওয়া অনেক বেশি হয়ে যায়। এছাড়া টিভির সামনে বসে অনেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খান। এতেও ওজন বাড়ে। তাই টিভির সামনে বসে না খাবার অভ্যাস করুন। কেউ কেউ গোশত রান্না করলে শুধু গোশত দিয়ে ভুনা বা ঝোল তৈরি করেন। এই কাজটি বন্ধ করুন। গোশত রান্নায় গোশতের সাথে সবজি ব্যবহার শুরু করুন। এতে করে গোশতের ক্যালরি কমাতে সাহায্য করবে সবজি এবং স্বাদেও আসবে ভিন্নতা। তাড়াহুড়ো করে খাবার অভ্যাস আসে অনেকেরই। এতে ওজন বাড়ে। কারণ তাড়াহুড়ো করে খাবার বেশি চিবিয়ে খাওয়া হয় না এবং হজমে সমস্যা তৈরি হয়। এতে করে দেহে জমে মেদ। তাই খাবার খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। স্যুপ এবং সালাদ জাতীয় খাবার দেহে কম ক্যালরি সরবরাহ করে। সাধারণভাবে তৈরি ঘরোয়া সালাদ খান। বিকেলের নাস্তায় কোনো প্রকার তেলে ভাজা খাবার খাবেন না। যাদের ওজন বেশি তারা কি পরবেন, কীভাবে সাজবেন সবকিছু নিয়েই দ্বিধায় ভুগে থাকেন। এমনকি কীভাবে পোশাক সেলাই করতে হবে সেটাও ঠিকমত বুঝে ওঠতে পারেন না অনেকে। যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তারা সামান্য গ্রুমিং-এর মাধ্যমেই নিজেকে দেখাতে পারেন বেশ খানিকটা স্লিম। যাদের শরীর কিছুটা মেদবহুল তারা হালকা রঙ-এর পোশাক এড়িয়ে চলুন। যে কোনো রঙ-এর সবচেয়ে গাঢ় শেডটা বেছে নিন পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। কালো, নেভি ব্লু, বোটল গ্রিন, কালচে মেরুন ইত্যাদি রঙগুলোতে শরীর কিছুটা স্লিম দেখায়। খুব আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলুন। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন যেন সেটা বেশি ঢোলা কিংবা আঁটসাঁট কোনোটাই না হয়। এছাড়াও খুব বেশি বড় গলা ও হাত কাটা পোশাক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মেকআপের ক্ষেত্রে মুখ কিছুটা চাপা দেখানোর জন্য ত্বকের চেয়ে এক শেড গাঢ় প্যান কেক দিয়ে গালের দুই পাশ চাপিয়ে নিন। এরপর ত্বকের রঙ-এর ফেস পাউডার দিয়ে ওপরে ব¬াশন লাগিয়ে নিন। তাহলে মুখের দুই পাশ ও ডাবল চিন কিছুটা কম বোঝা যাবে। যাদের মুখে মেদ বেশি তারা চুল ফুলিয়ে বাঁধবেন না। চুল স্ট্রেইট করে ছেড়ে রাখুন অথবা হালকা করে বেঁধে রাখুন। যারা সানগ¬াস বা চশমা পরেন তারা বড় আকৃতির ফ্রেম নির্বাচন করুন। বেশি ছোট ফ্রেম নির্বাচন করলে মুখের আকৃতি আরও বড় দেখাবে। নেকলেস পরার ক্ষেত্রে গলার সঙ্গে এঁটে থাকা নেকলেস পরবেন না। একটু ঝোলানো ধরনের মালা বেছে নিন নিজের জন্য। যাদের শরীর মেদবহুল তারা খুব বেশি চিকন হিল পরবেন না। খুব বেশি চিকন হিল পরলে দেখতে বেমানান দেখাতে পারে এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
মোস্তফা ফারুক আল বান্না আরো বলেন, নিয়মিত পরিমাণমত ঘুমাবেন, দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলবেন। পেটের অসুখ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। নিজের প্রতি আস্তা রাখুন, সব সময় পজেটিভ ধারণা পোষণ করুন।
আপনার সকল চাওয়া পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। জীবনের সব ক্ষেত্রে বিধাতার নিয়ম-নীতি মেনে চললে আপনার সুখ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আলম শামস
কবি ও সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা
মোবাইল ০১৯১১১৬১৩৪৪।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন