পাইলস অতি পরিচিত একটি রোগ। এটাকে বলা হয় সভ্যতার রোগ। অর্থাৎ এই রোগটি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শহরে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত লোকদের মাঝেই বেশি দেখা যায়। তার প্রধান কারণ তাদের জীবন-যাপন পদ্ধতি যেমন কমপানি, কম শাকসবজি, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সময়মত মলত্যাগ না করা। উপরের উল্লেখিত জীবন- যাপনের কারণে কোষ্ঠ-কাঠিন্য দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত প্রেসার দিতে হয়। ফলে মলদ্বারের চারিদিকে রক্তনালী ও মাংসপি- ফুলে গিয়ে পাইলস সৃষ্টি করে।
পাইলসের উপসর্গ
(১) গর্ভাবস্থায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। (২) পায়খানার সময় বিশেষ করে কষা পায়খানার সময় পাইলসের রক্তনালী ছিড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়। (৩) পায়খানার সময় ব্যথামুক্ত, টাটকা রক্তক্ষরণই পাইলসের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণ। তবে ধীরে ধীরে চিকিৎসার অভাবে এই রোগ জটিল আকার ও অন্যান্য উপস্বর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন:
ক) পাইলস মলদ্বারের বাহিরে বের হয়ে আসা,
খ) বাহির হওয়ার পর ভিতরে না প্রবেশ করা
গ) ব্যথা ও ইনফকশন দেখা দেয়া ইত্যাদি।
পাইলস হলে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি?
৪০ বৎসর বয়সের উপরে ৬০% লোকের মলদ্বার পরীক্ষা করলেই পাইলস দেখা যাবে। সৌভাগ্যের বিষয় সবারই চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কোন উপস্বর্গ বা জটিলতা দেখা না দিলে চিকিৎসার প্রয়োজন নাই।
কখন এবং কি চিকিসা করবেন?
উপস্বর্গ বা জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসা অতীব জরুরি।
প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ শুধুমাত্র শক্ত পায়খানার সময় ব্যথামুক্ত রক্তক্ষরণ হলে :
পায়খানা নরম বা নিয়মিত রাখুন, প্রয়োজন হলে ইসুবগুলের ভুষি বা লেকজেটিভ খান, প্রচুর পানি ও শাকসবজি খান, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন এবং নিয়মিত মলত্যাগ করুন।
জটিলতার আকার ধারণ করলে অর্থাৎ পাইলস বেরিয়ে আসলে এবং উপরোক্ত চিকিৎসা যদি কাজ না করে তবে-
ইনজেকশন
ব্যান্ড লাইগেশন
অপারেশন ইত্যাদির যে কোন ১ টি করে নিতে হবে।
জটিল পাইলসের ক্ষেত্রে ব্যান্ড লাইগেশন ও ইনজেকশন একটি কার্যকর সফল চিকিৎসা পদ্ধতি। এটা ব্যথামুক্ত এবং রোগী ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
পাইলসের কখন এবং কি অপারেশন করা হয় :
পাইলস যখন মলদ্বারের বাহিরে অবস্থান করে অর্থাৎ মলত্যাগের পর পাইলস আপনা আপনি ভিতরে প্রবেশ না করে অথবা ভিতরে প্রবেশ করানোর পরও বাহির হয়ে আসে তখন অপারেশনই হচ্ছে একমাত্র সঠিক চিকিৎসা।
দুই পদ্ধতিতে অপারেশন করা যায়-
১) পুরানো পদ্ধতি ও
২) নতুন পদ্ধতি
১) পুরানো পদ্ধতিতে রোগীকে অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয় বলে এখন উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় না।
২) নতুন পদ্ধতি-২ প্রকার- ক) লংগু ও খ) ডায়াথারামি পদ্ধতি
লংগু অত্যন্ত ব্যয়বহুল পদ্ধতি ৫০-৬০ হাজার টাকার খরচ পড়ে এবং ডায়াথারামি স্বল্প খরচ পদ্ধতি। মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। উভয় পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত। এই নতুন পদ্ধতিতে রোগীর একদিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয় না। উভয় পদ্ধতিই ব্যথামুক্ত ও অত্যন্ত কার্যকর।
পাইলস চিকিৎসার পর আবার দেখা দিতে পারে কি?
সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে এ রোগ আবার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা কম।
উপদেশ:
পাঠকগণ এই রোগটির রোগীরা সবচেয়ে বেশি অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়। কারণ বেশির ভাগ রোগীরা হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারা এসিড জাতীয় অত্যন্ত ক্ষতিকারক জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। যার ফলে পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকার জটিলতা নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসে।
যেমন-
- পায়খানার রাস্তায় ঘাঁ হওয়া।
- মলদ্বার চিকন হয়ে যাওয়ায় মলত্যাগে প্রচ- ব্যথা হওয়া।
- মলদ্বারে ক্যান্সার হওয়া।
-মলদ্বারের ক্যান্সারকে পাইলস মনে করে ভুল চিকিৎসা করা ইত্যাদি।
অতএব পাইলস সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হোন।
অধ্যাপক: ডাঃ এম এ হাসেম ভূঁঞা
জেনারেল লেপারোস্কোপিক, কলোরেক্টাল ও ক্যান্সার সার্জন।
মোবাইল : ০১৭১১-৫৩৩৩৭৩
সেন্ট্রাল হাসপাতাল লি:, বাড়ি#২, রোড#৫, গ্রীন রোড ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন