শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার মতো একই ধরনের ‘অপরাধে’ এক মাদরাসা শিক্ষককে আটক করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকাকে কেন আটক করা হয়নি?- সেই প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। প্রশাসনের এই বৈষম্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ফেসবুকে অনেকেই ক্ষোভ জানিয়ে মাদরাসার প্রতি এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে অধিকাংশের প্রশ্ন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চুল কেটে দেওয়া শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করার পরও কেন ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়নি। অথচ এক মাদরাসা শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার একদিনের মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করা হলো, যেখানে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কোন অভিযোগও ছিল না। মাদরাসার প্রতি কেন এই বৈষম্য?-জানতে চান তারা।
ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘‘লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হামছাদী কাজির দিঘীর পাড় আলিম মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছয় ছাত্রের চুল কেটে দেয়ায় সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের তীব্র আন্দোলনের পরও তাকে আটক করা হয়নি। এই বৈষম্যের কারণ কী?’’
অত্যন্ত আক্ষেপ করে মুহাম্মাদ নিজাম উদ্দিন ফরিদ লিখেছেন, ‘‘ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ায় শিক্ষককে আটকের প্রতিবাদ করছি। মাদরাসা দ্বীনী প্রতিষ্ঠান। এখানে সুন্নতের চর্চা শেখানো শিক্ষকের দায়িত্ব। বখাটে টাইপের চুল কাটার নির্দেশ দিতে হবে, নিজেরা না কাটলে অবশ্যই কেটে দিতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের খবর কি প্রশাসন জানে না?
স্কুলে বোরকা নিষিদ্ধ করা, ওড়না খুলে ফেলা শিক্ষকদের কি এত দ্রুত আটক করতে পেরেছিল প্রশাসন? সামান্য চুল কাটার কারণে শিক্ষককে হয়রানি করা মানেই কিশোরগ্যংয়ে উস্কে দেওয়া।প্রয়োজন ছিল এ শিক্ষককে পুরস্কৃত করা। যে দেশে সামান্য শাসনের কারণে, বখাটে টাইপের চুল কাটার কারণে শিক্ষককে আটক হতে সেদেশে শিক্ষক-অভিভাকদের ওই ছেলেরা পেটাবে, শিক্ষকের সামনে ছাত্ররা সিগারেট খাবে, পলিটেকনিকের ছাত্র অধ্যক্ষকে ধরে পুকুরে ফেলে দেবে এটাই তো স্বাভাবিক।
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার দুঃখ করে বলেছিলেন, ছাত্ররা এখন সালামও দেয় না...!’’
তাইমুম বাপ্পির প্রশ্ন, ‘‘একই অপরাধে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনেরও গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। একই অপরাধে দ্বিমুখী আচরন কেন?’’
ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়ে মনির লিখেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও একই কাজ করলেন, অথচ তাকে আটক করা হল না।এদিকে সভাপতি ঘুষি মেরে প্রধান শিক্ষকের দাত ফেলে দিলো তাকেও গ্রেফতার করা হল না। অথচ বোবাধন মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করে পুলিশ বসে আছে। এজন্যই গ্রামে একটি কথার প্রচলন আছে,,,,ল্যাংরার মাউগ(স্ত্রী) হগলডির ভাউজ।..’’
তাইফুর রহমনা তাইফ লিখেছেন, ‘‘ঠিক আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাস্যময়ী হাতাকাটা ব্লাউজ পরুয়া শিক্ষিকা চুল কাটলে বহিষ্কার, মাদ্রাসার দাঁড়িওয়ালা শিক্ষক কাটলে গ্রেফতার। ন্যায়বিচারের এক স্বর্গভূমে আছি।’’
এস.এম হুমাউন কবির লিখেছেন, ‘‘লক্ষ্মীপুরে ৬ ছাত্রের চুল কেটে দেয়ার অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।অন্যদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কাটার ‘প্রমাণ পেয়েছে’ তদন্ত কমিটি কিন্তু এখনো শাস্তি পায়নি সেই শিক্ষিকা।ফ্যাক্ট মাদ্রাসার শিক্ষক বলে কথা।’’
মামুন চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘হীরক রাজার দেশ! এ ঘটনায় কারো তেমন অভিযোগ নাই, নাই কোন আন্দোলন। তবু ও আজ মাদ্রাসার শিক্ষক বলে পুলিশ স্বপ্রনোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করে।অথচ রবীদ্র বিশ্ব বিদ্যালয়ের সে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নাই।মাদ্রাসার শিক্ষক বলে আজ তোরা যা ইচ্ছা তাই করতেছোস। আল্লাহর লানত তোদের উপর।’’
প্রিন্স মোহাম্মাদ লিটন লিখেছেন, ‘‘চুলকানি সব মাদরাসা আর দীনদারদের নিয়ে যেটা শয়তান করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেফতার করে না আর মাদরাসার শিক্ষককে কেনো গ্রেফতার করা হবে -এতেই বুঝা যায় শয়তানের অনুসারী কারা।অবিলম্বে মুক্তিদিন।’’
মোঃ নাইম লিখেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষিকাকে আটক করা হয়েছিল???একই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় আর মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রতি ভিন্ন আইন কেন?আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বিপদে পরত অন্যায়ভাবে তাহলে আমি তার পক্ষই করতাম।এখানে বিশ্ববিদ্যালয় আর মাদ্রাসা বলে কথা না।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন