ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সুদের লাভের টাকা সময়মতো না দিতে পেরে জোর করে গরু বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যায় এক দাদন ব্যবসায়ী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেই পরিবারটি তার একমাত্র সম্বল গরু দু'টি হারিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে আর্তনাত করছেন।
জানা যায়, উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর (মলামারী) গ্রামের মো. জনাব আলীর ছেলে মো. এবাদুল হক (৪৫) গরু ব্যবসা করে বাবা, স্ত্রী, সন্তানসহ মোট ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সদস্য নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। এরই মাঝে করোনা মহামারীতে গরু বাজার বন্ধ হওয়ায় এত বড় সংসার নিয়ে চলা যেন আরো কষ্টকর হয়ে যায়। এঅবস্থায় এবাদুল দিশাহারা হয়ে টাকার জন্য দিক বেদিক ছুটাছুটি করেও কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় লাভের উপরে টাকা চান একই গ্রামের মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত দাদন ব্যবসায়ী লিটন মিয়ার(৪৫) কাছে। তখন লিটন মিয়া প্রতি লাখে ৮হাজার টাকা লাভে নিতে হবে বলে জানিয়ে দেয় এবাদুলকে। কিন্তু অসহায় এবাদুল নিজের এত বড় সংসার ও গরু ব্যবসা সক্রিয় করতে এমন কঠিন বুঝা না নিয়ে উপায় ছিলোনা। অবশেষে উভয়ের সম্মতিতে ২০২০ সালের শেষের দিকে এমন শর্তে লিটনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় এবাদুল। তারপর শুরু করে পুনরায় গরু ব্যবসা এবং সেই ব্যবসায় সফলতা পেয়ে সুদের লাভের ২০ হাজার টাকা দেওয়া ও মোটামুটি ভাবে চলছে সংসার। এরই মাঝে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবং বাজার চালু হওয়ায় গরু ব্যবসা আরো অধিক ভালো থাকায় দাদন ব্যবসায়ী লিটনকে তার পাওনার মূল টাকা থেকে ১লাখ টাকা দিয়ে দেয় এবাদুল। তারপর থেকে প্রায় পাঁচ মাস যাবত মূল আরো ১লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে প্রতিমাসে লাভের ১২হাজার টাকা দিয়ে আসতে থাকে। এই অবস্থায় হঠাৎ করে গরু ব্যবসায় অবনতি হলে এবাদুল সংসার চালিয়ে লাভের মাসিক ১২হাজার টাকা প্রায় আড়াই মাস যাবত দিতে পারে নাই। যেহেতু লাভের টাকা দিতে পারে নাই তখন থেকেই এবাদুলের উপরে লাভ ও মূল টাকা পরিশোধের জন্য চাপ শুরু করেন লিটন। আর সেই চাপে এবাদুল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখা থেকে ১লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লিটনের মূল ১লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বাকি থেকে যায় লিটনের আড়াই মাসের লাভের ৩০হজার টাকা। আর সেই লাভের টাকা পরিশোধ করতে এবাদুলকে চাপ শুরু করে লিটন। কিন্তু এবাদুল দিতে না পারায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশ বসে। আর সেই সালিশে সিদ্ধান্ত হয় লিটনের লাভের ৩০ হাজার টাকা থেকে বিশ হাজার এবাদুলের দিতে হবে। আর সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাভের ২০হাজার টাকা পরিশোধ ও ব্যবসার লাভের জন্য পূর্বে কিনে রাখা দু'টি গরু স্থানীয় উচাখিলা বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। এবাদুল বিক্রির জন্য বাজারে গরু নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে লিটন ও তার ভাইয়েরা সেই বাজারে গিয়ে এবাদুলের কাছ থেকে জোর করে গরু নিয়ে বিক্রি করে সব টাকা নিয়ে নেয়। এসময় এবাদুল ও তার ছেলে বাঁধা দিলে তারা এবাদুলের ছেলেকে মারধর শুরু করে। এতে এবাদুল নিরুপায় হয়ে স্থানীয় এউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায়। আর সেই সময় চেয়ারম্যানের সাথে বসা ছিলো থানার এসআই উমর ফারুক। তখন চেয়ারম্যান বিষয়টি এসআইকে দেখার জন্য বলে। তখন সেই এসআই এবাদুলকে সাথে নিয়ে গরু বাজারে গিয়ে দেখে লিটন ও তার ভাইয়েরা চলে গেছে। তারপর এসআই উমর ফারুক বিষয়টি নিয়ে এবাদুলকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। পরে এবাদুল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দুপক্ষকেই থানায় আসতে বলে পুলিশ। তারপর ওসি তদন্ত থানায় বসে তাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেও সমাধান দিতে পারেনি। এঅবস্থায় ভুক্তভোগী এবাদুল হতাশ হয়ে ময়মনসিংহ জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী এবাদুল বলেন, গরু ব্যবসার জন্য লিটনের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখে ৮ হাজার টাকা লাভে ২লাখ ৫০হজার টাকা নিয়েছি। নেওয়ার পর থেকেই তার লাভের টাকা পরিশোধ করে আসছি। এরই মাঝে লিটনের দেওয়া মূল টাকা থেকে প্রথমে ১লাখ টাকা পরিশোধ করেছি তার কিছুদিন পর ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে আরো ১লাখ ৫০ হজার টাকাও পরিশোধ করি। কিন্তু বাকী থেকে যায় লিটনের আড়াই মাসের লাভের ৩০ হাজার টাকা। পরে সেই টাকা নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশ করে ২০হাজার টাকা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে তাই কয়েকদিন পূর্বে ক্রয় করা দু'টি গরু বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে গেলে তারা স্থানীয় ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় জোর করে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। তারপর পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় বিচার দিয়ে ও কোন বিচার পাইনি। তাই কোর্টে মামলা করেছি। এমন পরিস্তিতিতে আমি পরিবারের ৯ জনকে নিয়ে সংসার চালাতে আর পারছিনা। এখন কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
এবিষয়ে লিটন মিয়া বলেন, আমি এবাদুলের কাছে টাকা পাই সেই টাকা চাইতে গেলে দিবে দিবে বলে বারবার তারিখ দেয় কিন্তু পরিশোধ করেনি। গরু বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার গরু আমি বিক্রি করেছি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় এসেছিলো কিন্তু কাহারো কোন সঠিক তথ্য প্রমান না থাকায় সমাধান সম্ভব হয়নি। পরে শুনেছি একটি পক্ষ কোর্টে মামলা করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন