স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পরিচয়পত্র হিসাবে স্মার্ট কার্ড পরীক্ষামূলকভাবে বিতরণ কার্যক্রমে প্রচারণার দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা, কারিগরি ত্রুটিতে নাগরিক ভোগান্তিসহ নানা ধরনের মুখোমুখি হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা। বিতরণের শুরু থেকে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ‘যান্ত্রিক জটিলতায়’ ভোগান্তিতে পড়ছে নাগরিকরা।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বরের অর্ধেক স্মার্ট কার্ড এখনো বিতরণ হয়নি বলে জানা গেছে।
ইসির এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য রাজধানীর প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একাধিক ক্যাম্পে কার্ড বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে দুইটি কেন্দ্র শেষ হয়েছে। নতুন করে দুই কেন্দ্র বিতরণশুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১০ কোটি ভোটার আছে। এদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ভোটারের লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। আমাদের এই স্মার্ট কার্ড পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধাসম্পন্ন। এই স্মার্ট কার্ডে ২৫ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা কেউ কখনোই নকল করতে পারবে না। যেখানে সমস্যা হচ্ছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করছি। যাতে আগামী দিনে বিতরণে সমস্যায় পড়তে না হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯ কোটি নাগরিকের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ‘স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অপারেটরদের কার্ড প্রতি ৫ টাকা করে সম্মানী হিসেবে ৪৫ কোটি টাকা, প্রচারে ১০ কোটি এবং বিতরণকারীদের যানবাহন ব্যয় ১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ বিতরণ কাজে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে অন্তত আরও একডজন খাতে বাকি অর্থ ব্যয় হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ দিনে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের কর্মপরিকল্পনায় কমিশনের কাছে এ সম্ভাব্য ব্যয় তুলে ধরেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সে অনুযায়ী, প্রতিটি স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য প্রায় ৯ টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। প্রতিটি স্মার্ট কার্ড তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুই ডলার। প্রথমবার স্মার্ট কার্ড বিনামূল্যে বিতরণ করা হলেও পরে যে কোনো ধরনের সংশোধন বা হারানো কার্ড তুলতে গেলে নির্ধারিত হারে ফি দিতে হবে।
রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মহবুবা মমতা হেনা ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল রাজধানীর ২০ নং ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৭২২ জনের মধ্যে বিতরণ করার কথা কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মধ্যে এক হাজার ৩শ’ বিতরণ করা হয়েছে। আজকে যারা বাদ পড়েছে তাদের আগামীকাল দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সাধারণভাবে শুক্রবার-শনিবার নাগরিক উপস্থিতি বেশি থাকে। ১৯ নং ওয়ার্ডেও অনেক স্মার্ট বিতরণ হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আমরা বিতরণ শেষ করেছি এর মধ্যে অনেকই আসে নাই। তার কার্ড নিতে পারে নাই। এটা তো আমাদের দোষ না। পরবর্তীতে তাদের দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনেই নাগরিকদের নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা।
ঢাকার উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ চলছে আগামী ২২ অক্টোবর স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসলে কার্ড বিতরণ করা হবে। না আসলে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা পুরাতন কার্ডও ফির দিচ্ছি তবে কেটে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সেগুনবাগিচা হাই স্কুল কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওয়ার্ডের ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেলসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের এলাকা এই ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। এ সময় ভোটারদের কাছে থাকা লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এ ওয়ার্ডে নাগরিকদের কার্ড বিতরণে নানা ধরনের প্রচারণা চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি ও হলে হলে লিফলেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার নাগরিকদের আরও উপস্থিতি বাড়বে আশা করি। এ নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শেষ হয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পর ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর চলবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। এছাড়া উত্তরের উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ায় বিতরণ কার্যক্রম ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। স্মার্ট কার্ড নিতে আসা নাগরিকদের দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। নির্ধারিত দিনে সশরীরে এসে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তা নিতে হবে নাগরিকদের।
কোথায় কোন ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ হবে
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাবি অমর একুশে হল, ঢাকা মেডিকেল আবাসিক এলাকা, ঢামেক হাসপাতাল এলাকা, আবদুল গণি বোড় ও সচিবালয় স্টাফ কোয়ার্টার, ইস্টার্ন হাউজিং ও টয়েনবি সার্কুলার রোড এবং টিবি ক্লিনিক এলাকা। আগামী ১৪ অক্টোবর : তোপখানা রোড। ১৫ অক্টোবর : পুরাতন রেলওয়ে কলোনি পশ্চিম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও আ/এ, ঢাবি ফজলুল হক হল, ফুলবাড়িয়া স্টেশন পূর্ব, রমনা গ্রীন হাউজ, রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকা, শহীদুল্লাহ হল। ১৭ অক্টোবর : ফুলবাড়িয়া পশ্চিম ও সেক্রেটারিয়েট রোড, হাইকোর্ট স্টাফ কোয়ার্টার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। ১৮ অক্টোবর : ঢামেক ফজলে রাব্বী হল, আহসান উল্লাহ হল, ডা. এম এ রশীদ হল, তিতুমীর হল, নজরুল ইসলাম হল, শহীদ স্মৃতি হল (বুয়েট), শেরে বাংলা হল, সোহরাওয়ার্দী হল (বুয়েট), বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, রেস্ট হাউজ এবং কবি সুফিয়া কামাল হল। ১৯ ও ২০ অক্টোবর সেগুনবাগিচা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন