ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা বিভিন্ন সময় এ সমিতির সভাপতি ও সমিতির প্রকল্পের শীর্ষ পদে দায়িত্বে ছিলেন তারা আত্মসাৎ করেছেন। সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির উদ্যোগে আজ (শনিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সমিতির ২০১৮-২০২০ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা এ তথ্য জানান।
এ সময় সমবায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তৈরি নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সরকার। এ সময় সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম, সদস্য হুমায়ুন কবির লিটন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০০৫ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সমিতির কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে প্রোগ্রাম ফর পারফরমেন্স ইমপ্রুভমেন্ট (পিপিআই) প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার সাতটি জোনের পানির বিল ও মিটার স্থাপনসহ রাজস্ব আদায়ের কাজ পায় সমিতি। ওয়াসার আদায়কৃত মোট রাজস্বের ১০ শতাংশ সমিতির একাউন্টে জমা হতো। এ খাত থেকে প্রতি বছর সমিতির শতাধিক কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু যারা বিভিন্ন সময় সমিতি ও পিপিআই প্রকল্পের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা এই টাকার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন।
সমবায় অধিদপ্তরের অডিটে দেখা গেছে আত্মসাৎকৃত সেই টাকার পরিমাণ ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা। যে সময়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে সেই সময়ে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াসার সিবিএ নেতা ও ইন্সপেক্টর হাফিজ উদ্দিন, ইন্সপেক্টর মোঃ শামসুজ্জামান ও বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আক্তারুজ্জামান। এ সময়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান মিয়া, রাজস্ব পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন। আর পিপিআই প্রকল্পের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা ওয়াসার বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আক্তারুজ্জামান ও রাজস্ব পরিদর্শক মিয়া মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এর মধ্যে হাফিজ উদ্দিন ও আতাউর রহমান মারা গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, হাফিজ উদ্দিন ও আক্তারুজ্জামান এই লুটপাটে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। যে কারণে হাফিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর আক্তারুজ্জামান ও রাজস্ব পরিদর্শক জাকির হোসেনকে দিয়ে গঠিত কমিটি সমবায় আইনকে পাশ কাটিয়ে দায়িত্ব আকড়ে ধরে রাখতে অনেক কুটকৌশল চালিয়েছে। তারপরও সমবায় অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কমিটি নির্বাচিত হলেও তাদেরকে কমিটির যাবতীয় হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এক বছর ধরে তারা অফিসটিও দখল করে রেখেছে। এছাড়া সমিতির পিপিআই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওয়াসা প্রকল্পের পারফরমেন্স সিকিউরিটির প্রায় ৮ কোটি টাকা, ৬২ হাজার পানির মিটার, চার-পাঁচ মাসের বিলের সার্ভিস চার্জ, ২৪টি প্রাইভেট কার ও লেগুনা, সাতটি জোনের আসবাবপত্রসহ সাকুল্যে ২০০ কোটি টাকার মালামাল আটকে রেখেছে, যার মালিক সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন, এছাড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর ২০২৮-২০ সময়ের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বে থাকা হাফিজ উদ্দিন-আতাউর রহমান পরিষদ, আক্তারুজ্জামান-জাকির হোসেন পরিষদ, পিপিআই পরিচালন পর্ষদের নেতৃত্বে থাকা মোঃ আক্তারুজ্জামান-জাকির হোসেন পরিষদ ও আক্তারুজ্জামান-মিয়া মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত এসব অভিযোগ সম্পর্কে সমিতির সাবেক সভাপতি ও পিপিআই পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, সমবায় সমিতি এ ধরনের কোনো অডিট রিপোর্ট দিয়েছে বলে তার জানা নেই। তিনি যে কদিন দায়িত্বে ছিলেন দায়িত্ব ছাড়ার পর সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন আর এসবের মধ্যে তিনি নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন