পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনাকে পূঁজি করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বিভাজন সৃষ্টি করে তারা এটাকে পূঁজি করে সেটাকে আবার তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শান্তি মিছিল কর্মসূচি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তি মিছিল বের করেছে। অশান্তি ঘটালেন আপনারা, আগুন দিলেন আপনারা, মারলেন আপনারা, গুলি করলেন আপনারা এবং নিরহ মানুষদের হত্যা করলেন, আজকে (গতকাল) শান্তি মিছিল বের করছেন। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। আওয়ামী লীগ এটাই। এটাই আওয়ামী লীগের খাঁটি চরিত্র। এটাই তারা করে এসেছে জন্মের পর থেকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এদেশের মানুষ অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আমাদের অর্জনগুলো সমস্ত হারিয়ে যাবে। আমরা আরো বেশি নিচের দিকে নামতে থাকবো। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সকল সচেতন মানুষ যারা আছি তারা এই দানবীয় সরকারকে সরাতে হবে। এদেরকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, সাদা-কালো, বাম-ডান সকলকে এক হয়ে এদেরকে সরাতে হবে। এদেরকে সরিয়ে এখানে জনগণের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, জনগণের সরকার, জনগণের বাসভূমি তৈরি করতে হবে। তাহলেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে সবচেয়ে বেশি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
এবারের পূজামন্ডপে মানুষজন কম উপস্থিতি হয়েছিলো উল্লেখ করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা-সংকট সরকার তৈরি করেছে। এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছেন। দাদার বাড়িতে পূজা হয়েছে সেই বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। এর আগের বছর যখন গেছি তখন দেখেছি কি উৎসব, কি আনন্দ। সেখানে কাছাকাছি আরো কয়েকটা পূজামন্ডপে পূজা হচ্ছে লোকজন রাস্তায় বোঝাই হয়ে ছিলো। এবার গিয়ে দেখলাম দাদার বাড়িতে ওইভাবে লোক নেই, কারণ মানুষ ভয় পেয়ে গেছে, সেভাবে লোক আসছে না। পূজা সেভাবে হচ্ছে না। এবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে সেখানেও আমি দেখেছি- অনেক কম মানুষ, বনানীতে পূজামন্ডপে গেছি সেখানেও অনেক কম মানুষ। কেনো? আমাদের অন্যতম ভাই, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশি, আমাদের দেশের স্বাধীন নাগরিক তারা কেনো তাদের ধর্মের উৎসব পালন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে বিভাজন সৃষ্টি করছে।’
আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্র ফেরত দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বুঝার কোনো কারণ নেই যে, তারা আমাদেরকে গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্র তারা নিজের হাতে শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে এবং এবার ২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং পরবর্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তার নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে তার জীবনাদর্শ ও দর্শন অনুসরণের আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতিবিদরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে জিয়ার সফল উত্থান। তিনি জেনেশুনে আই রিভোল্ট বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিশ্বের সব বিপ্লবের সাথে একজন ব্যক্তির নেতৃত্ব থাকে। যা শহীদ জিয়ার ছিলো। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যে সবাইকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি দেশের সমৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। আজকে মানুষ না খেয়ে মরছে না বলা হয়। তবে গুম হয়ে মরে ঠিকই।
তিনি বলেন, জিয়া ছিলেন জনগণের। তার মতো সততা, দেশপ্রেম, সাহসের সাথে কারো তুলনা হয় না। তিনি দেশে একটা জাগরণ তৈরি করেছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশবাসী জেগে উঠেছিলো। দেশের সকল উন্নয়ন প্রকল্পে জনগণকে সম্পৃক্ততা করেছিলেন তিনি।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় শিক্ষাবিদ প্রফেসর আফম ইউসুফ হায়দার, পেশাজীবী নেতা গাজী আব্দুল হক, প্রকৌশলী মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডা. পারভেজ রেজা কাঁকন, প্রফেসর আবদুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনে ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আরিফা সুলতানা রুমাসহ পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন