রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মানুষের সবচেয়ে প্রিয় হলো তার জীবন। তাই সবার হৃদয় জুড়ে থাকে বেঁচে থাকার বাসনা। খাদ্য ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ বিশ^চরাচরে খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে এমন কোন জীব নেই। প্রতিটি জীবের জন্য চাই খাদ্য। তাই মানুষ স্বভাবগত নতুন বিষয়ে আগ্রহী থাকে। নতুনত্ব নিয়ে আসতে চায় সব ক্ষেত্রে। তাই খাদ্যের নতুন ও আকর্ষনীয় ভাব মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। জিহ্বার স্বাদ যে অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়, সেটা আমাদের অনেকেরই জানা। তাই আসুন, জেনে নেই ফাস্টফুডের ক্ষতিকর দিক।
স্বাস্থ্যঘাতী ফাস্টফুড- বর্তমানে সারা বিশ্বে বাড়ছে অনেক অজানা খাদ্যবাহিত রোগ। আর এগুলোর মূল কারণ হিসাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রসনাতৃপ্তিদায়ক ফাস্টফুড। বিশ্বজুড়ে যার নাম জাঙ্কফুড। যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সংশ্লিষ্ট রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় দুই লাখ লোক। যার মধ্যে প্রায় ৫০ জন মারা যায়। বার্গার, পিজা ইত্যাদি খাবেন কি না সিদ্ধান্ত নিন। ফাস্টফুড বলতে গেলে অন্তরে যে জিনিসটি কল্পনায় আসে তা হলো বার্গার। অনেকের খুব প্রিয় এই বার্গার। বার্গার সম্পর্কে ভালো না জানা বা সঠিক না জানাই তা প্রিয় ভাব ধরে রেখেছে। আসুন জেনে নেই বার্গারের গোপন কথা। বার্গারে যে গরু বা খাসির গোশত দেয়া হয়, তার অবস্থা সম্পর্কে জানি। আমেরিকার কথা বলি, তাহলে দেশের অবস্থা বোঝা যাবে। সেখানে কিভাবে গরুর গোশত প্রস্তুত করা হয়? সেখানে একটি বিফ বার্গারে যে গোশতের কিমা থাকে তা অন্তত এক ডজন গরু এবং কখনো কখনো কয়েক শ’ পর্যন্ত গরুর গোশত মিশ্রিত থাকে। এটিও প্রমাণিত হয়েছে বিশ^খ্যাত দুটো আমেরিকান ব্রান্ডের বার্গারে এত নিম্নমানের গরু বা মুরগির গোশত ব্যবহৃত হয়, তা গৃহপালিত কুকুরের খাবারেরও অযোগ্য। আর গরুর অবস্থাও তেমন পর্যবেক্ষণ করা হয় না। সেখানে চামড়া এমনকি গোবর পর্যন্ত লেগে থাকে। সাথে গোশতবাহিত জীবাণু যেমন ই-কোলাই, সালমোনেলাসহ আরো অনেক জীবাণু থাকে। এক মণ গোশত সংক্রামিত করতে একটি জীবাণুই যথেষ্ট। আর আপনি বুঝবেনই বা কিভাবে, তা আপনার কাছে আসার আগে প্রচণ্ড চাপে ডিপ ফ্রাই করা হয়। আর ভাবছেন যে ফ্লেভার তা অর্জিনাল! না তা হচ্ছে যোগ করা। এক প্রকার দ্রব্য পাওয়া যায় গোশতের মতো গন্ধ দেয়। যা খেয়ে হাজার হাজার লোক খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। সম্মানিত পাঠক একটু চিন্তা করুন, সভ্যতার সর্বোচ্চ আসনে থেকে যদি তাদের খাদ্য নিরাপত্তার এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের দেশের কী অবস্থা হতে পারে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৭ সালের আগে সে দেশে মৃত গবাধি পশুর গোশত বাজারে বিক্রি করা হতো। এক সময় ব্রিটেনে ম্যাডকাউ ডিজিজ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন সাংবাদিক এরিক শ্লোজার টানা তিন বছর গবেষণা ও অনুসন্ধান চালিয়ে ফাস্টফুড ন্যাশন নামে একটি বই লেখেন, যাতে আমেরিকার খাদ্য অবস্থার প্রমাণ রয়েছে। বইটি ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, মানুষের শরীরে একটি আণবিক উপাদান পিজিসি-১ বিটা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রবেশ করলে এটি লিভারকে এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারিন তৈরির বাধ্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। ক্যান্সারের কারণও হতে পারে এই বার্গার।
ফ্লেভার- জীবন নাশের নতুন হাতিয়ার ফাস্টফুডে আকর্ষণীয় ফ্লেভার আসলে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না। বিশেষ কিছু উপাদান ব্যবহার হয়। যার কারণে অনেক সময় নরমালের চেয়ে অনেক বেশি ফ্লেভার হয়। এসব ফ্লেভার এত শক্তিশালী যে একটি শুকনো কাঠের ওপর দেয়া হলে তাও সুস্বাদু করে তোলা সম্ভব। আর বেশি ব্যবহৃত টেস্টিং সল্ট, যা খুবই ক্ষতিকর।
বাড়ছে মেদ স্থুলতা মেদ- স্থূলতার বর্তমানে বড় কারণ এই ফাস্টফুড। আর এগুলোর প্রতিক্রিয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ মানসিক অশান্তি। অতিরিক্ত ওজনধারীদের অকালমৃত্যুর হার অনেক বেশি।
ফাস্টফুডে বুদ্ধিনাশ- তিন বছর বয়সের আগে শিশুদের এই ফাস্টফুড খাওয়ালে তাদের আইকিউ কমে যায়। লন্ডনে ২০১০ সালে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের চার হাজার শিশুর ওপর চালানো এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেন, ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্য দিকে সেসব শিশুকে ফলমূল, শাকসবজিসহ গৃহে তৈরি তাজা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়, তাহলে তাদের আইকিউ ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাই শিশুদের ফাস্টফুডে অভ্যস্ত না করে ফলমূলের প্রতি চাহিদা বাড়ানো উচিত। তাই আসুন, নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে জেনে-বুঝে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি। স্বাস্থ্যই সুখের মূল।
মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল: ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন