অর্ধেক পৃথিবীর বাদশাহ মুসলিম জাহানের খলিফা হারুন রশিদ খবর পেলেন তার সাম্রাজ্যে এমন এক গুণী পাখি আছে যে সাথে থাকলে শিকারী তুলনামূলক দশগুণ পাখি শিকার করতে পারে। পাখিটি ছেড়ে দিলে সে মাঠে গিয়ে অসাধারণ মিষ্টি সুরে নিজের স্বজাতি পাখিদের ডাক দেয়। তার আনন্দ আহবান পাখিরা ছুটে এসে পাখির মালিকের পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে। গুণী পাখির আনন্দ আহবান মুক্ত পাখিদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় বন্দিত্বের বেদনা আর মৃত্যুর করুণ বিষাণ। পাখির মালিককে খবর দিলেন হারুন রশিদ। বললেন, তোমার এ গুণী পাখিটির দাম কত? মালিক বলল, দশ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা। খলিফা হারুন তখন দশ হাজার দিনার দিয়েই পাখিটি কিনলেন।
মালিক তো দারুন খুশি। স্বয়ং বাদশাহ নামদার এখন তার পাখিটির ভক্ত। তিনি নিজে এখন এ গুণী পাখিটি সাথে করে শিকারে যাবেন। সে নিজেও এখন বাগদাদের বড় একজন পয়সাওয়ালা হয়ে গেছে। সে খলিফা হারুন রশিদকে পাখিটির গুণপনা বুঝিয়ে বলতে লাগলো। বুঝাতে লাগলো, কী করে তাকে দিয়ে শত শত পাখি শিকার করা যায়। বাদশাহ এবং তার সভাসদেরা খুবই আনন্দিত।
এমন সময় বাদশাহ হারুন রশিদ বললেন, দাও হে শিকারী, তোমার গুণী পাখিটি আমার হাতে দাও। আনন্দে উৎফুল্ল ও ভক্তিতে গদগদ হয়ে লোকটি তার পাখিটি তুলে দিলো বাদশাহর হাতে। সভাসদেরা খুশিতে হর্ষধ্বনি করে উঠলেন। হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে মহান বাদশাহ হারুন রশিদ পাখিটির ঘাড় মটকে দেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সদ্য কেনা গুণী পাখিটিকে হত্যা করেন। ছটফট করে পাখিটি নিথর হয়ে যায় বাগদাদের খলিফার রাজ গালিচায়।
শাহী দরবার নিস্তব্ধ। শিকারী হতবাক। সভাসদেরা ভয়ে কম্পমান। কেউ কিচ্ছু বলার সাহস পাচ্ছে না। বাদশাহ হারুন রশিদ তখন নিজেই বললেন, দশ সহস্র মুদ্রায় কিনে আমি এই গুণী পাখিটিকে কেন মেরে ফেললাম জানো? কারন সে তার স্বজাতির সাথে গাদ্দারি করে চলেছে। গুণকে অপব্যবহার করে সে অন্য পাখিদের জীবন নাশে তার মালিককে সাহায্য করছে। এমন গুণী পাখিদের ঘাড় মটকে দেওয়াই তাদের সঠিক পুরস্কার। স্বজাতির গাদ্দার যত গুণীই হোক তার ভূমিকার আর কোনো মূল্য থাকে না। সবাইকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই আমি দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রায় কিনে এ পাখিটিকে হত্যা করলাম। সত্যিই এ ঘটনা যুগ যুগ ধরে মানবজাতির জন্য শিক্ষা হয়েই রয়ে গেছে।
জামালপুর থেকে সত্তরোর্ধ একজন বুজুর্গ ফোন করে ঢাকার এক বড় শায়েখকে বলেন, আমার বড় ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সময়ে গভর্নর। যে গভর্নর পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। আমাদের পৈত্রিক বাড়ির যে ঘরে যে বিছানায় বঙ্গবন্ধু এসে বসে খাবার খেয়েছিলেন সেটি এখনো আমরা যতœ করে রেখে দিয়েছি। যদিও আমরা এখন বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করি, কিন্তু মূল বাড়িটি ঠিকই রেখেছি।
এবারকার দুর্গা পূজার মন্ডপে প্রদত্ত এক নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য শুনে আমার পারিবারও ঘরে বসে থাকতে পারেনি। সাধারণ মানুষের সাথে নামাজি মুসল্লিদের নিয়ে আমার লোকজন এবং বার্ধক্যে আমি নিজেও মিছিলে গিয়েছি। জামালপুরের কলঙ্ক এই বেয়াদব নেতার মুখে দু’টো জুতার বাড়ি মারতে পারলে মরেও শান্তি পেতাম। তাকে জনগণ অবাঞ্ছিত ষোষণা করেছে।
এই বেয়াদব সনাতন সম্প্রদায়ের মন্ডপে গিয়ে দুর্গাপূজাকে আবহমান বাংলার সব ধর্মের মানুষের উৎসব বলে, সবাইকে তার মত পূজায় অংশ নিতে বলার পাশাপাশি এ কথাও বলেছে যে, যারা মুসলমানদের পূজায় অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়, সেসব আলেমের দাঁড়ি টুপি শেভ করে দেবে। এ বেয়াদব কত বড় সাম্প্রদায়িক। কত বড় মুসলিম বিদ্বেষী। সে তো একজন হিন্দু হওয়ারও যোগ্য নয়। একজন প্রকৃত হিন্দুও এ ভাবে ইসলাম ও মুসলমানকে হেয় করতে পারে না।
যার কথা এই আদি আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মুরব্বী বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি খুব আলোচিত। ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন তার এক বক্তৃতায় এ ধরণের উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এমন মনোভাব পোষণ ব্যক্তিদের ইসলাম ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সুযোগের কথা বলেছেন। যে কোনো ব্যক্তির তার পছন্দের ধর্ম ও সংস্কৃতি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে কিন্তু অন্য ধর্মের বিধান ও ফতওয়াকে আঘাত করে টুপি দাঁড়ির বিরুদ্ধে উগ্রতা প্রদর্শন, সন্ত্রাসী উচ্চারণ ও সমাজে জঙ্গিবাদী ভাবধারা তৈরির অধিকার নেই।
বিশেষ করে নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে অপর সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বধর্মকে খাটো করার এবং আলেম উলামাদের দাঁড়ি শেভ করার হুমকি কোনো দায়িত্বশীল ও কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ দিতে পারে না। আওয়ামী ঘরনা, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি, সরকার ও বিরোধী দল নির্বিশেষে দেশের বিবেকবান মানুষ এতে ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ ও সীমাহীন মর্মাহত। এ ধরণের স্বধর্ম বিরোধী অর্বাচীন দেশ জাতি ও সরকারের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এরা করতে পারে না এমন কোনো কাজ নেই।
বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারেরর শাহাদাতবরণকারী সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রতি এদের আনুগত্য এবং ভালোবাসার ব্যাপারেও শতভাগ সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা, যে তার নিজ আল্লাহর সাথে শিরক করাকে কিছুই মনে করে না, নিজ ধর্মের বিধানকে বৃদ্ধাঙুলি দেখায়, স্বধর্মের ইমাম আলেম উলামার বর্ণিত বিধানকে অবজ্ঞা করে তাদের দাঁড়ি টুপি নামিয়ে ফেলার প্রকাশ্য হুমকি দেয়, তার মতো চরিত্রের নেতাকর্মীদের কুম্ভিরাশ্রæকে কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না। মায়াকান্না, নাটক, অভিনয়, চাটুকারিতা, সবচেয়ে বেশি জানতেন খন্দকার মোশতাক, আর কিছু নিষ্ক্রিয় গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে ভালো করে চেনেন এবং তাদের পেছনের কুশীলবরা।
জোর গলায় শ্লোগান আর ‘হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা’ ওয়ালারাই দুঃসময়ে সবার আগে সটকে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, এতো নেতা কর্মী। এতো প্রাণোৎসর্গকারী। ১৫ আগষ্ট তারা কোথায় ছিলেন। জাতির পিতার লাশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিঁড়িতে পড়ে রইল। কোনো নেতাকর্মীই কেন রাস্তায় নেমে এলো না সেদিন।
কেউ এগিয়ে না এলেও মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেদিন টুঙ্গিপাড়ায় এই দাঁড়ি টুপিওয়ালা কিছু মানুষই, একজন হাফেজ ও কয়েকজন আলেম সাহেবই দুঃখ শোক ও ভীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুর দাফন কাফন ও জানাযা সম্পন্ন করে তাকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় মর্যাদায় কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক সমাহিত করেছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন