শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানদের বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়া যাবে না

প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাত্র একদিনের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ আগমনের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। এদের একজন হলেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার। আরেক জন হলেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিনসেন্ট স্টুয়ার্ট। জেমস ক্ল্যাপার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করছেন তাতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বিস্তৃতির আশঙ্কা আছে। বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। বলা হয়, শুনানিতে জেমস ক্ল্যাপার ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে বিদেশী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ইসলামিক স্টেটের হামলা ও তার দায় স্বীকারের কথা তুলে ধরেন। একইভাবে তুলে ধরেন ১১ জন লেখক ও ব্লগারের ওপর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের হামলা ও দায় স্বীকারের কথা। শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে বিদেশী হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে যে বক্তব্য দেয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই গোয়েন্দা প্রধান। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এখানে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতার রীতি। কিন্তু কট্টরপন্থি সহিংসতা এখানে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে ইসলামিক স্টেটের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছে। এ সব সহিংসতার জন্য তারা দায়ী করছে ইসলামপন্থি গ্রুপ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশে বিরাজ করছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। ওই নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এতেও রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিনসেন্ট স্টুয়ার্ট বিশ্বব্যাপী আইএসের হামলা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের সুযোগ নিয়ে আইএস তাদের হামলা আরো জোরদার করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। গত সোমবার এক নিরাপত্তা সম্মেলনে স্টুয়ার্ট তার এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন। ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, মালি, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশে আইএস সংঘবদ্ধ হয়ে উঠছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা প্রধানের বক্তব্যে শুধু বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়, তার আশঙ্কা আফ্রিকা থেকে এশিয়া পর্যন্ত ৫টি দেশ সম্পর্কে। এখানে তিনি প্রধানত আইএসের হুমকি নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান জেমস ক্ল্যাপারের বক্তব্য অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন এবং মার্কিন সিনেটে শুনানিকালে এই বক্তব্য দিয়েছেন। তার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি তার বক্তব্যকে আনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত এবং অসৌজন্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এইচ টি ইমামের  মতে, জেমস ক্ল্যাপারের উক্তি বানোয়াট। কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে মোটেই হালকা করে দেখেন না। বলাবাহুল্য, মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের বক্তব্য বা আশঙ্কা সত্য হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। তবে রাজনীতির বিচক্ষণতা হলো সেই কাজ যেখানে একটি পরাশক্তির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের বক্তব্যকে হালকাভাবে গ্রহণ না করা এবং তার বক্তব্যকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা এবং তার সত্যতা খতিয়ে দেখা। সত্যতা খুঁজতে যেয়ে যদি দেখা যায়, তার বক্তব্য বা আশঙ্কা আংশিক হলেও সত্য, তাহলে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে সংলাপ শুরু করা। বিরোধী দলকে আন্ডার-মাইন করা, অর্থাৎ তুচ্ছ জ্ঞান করার অভিযোগটি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা যতই উড়িয়ে দেন না কেন, কঠোর বাস্তব হলো, বাংলাদেশে আসল বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক পন্থায় অবাধে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। জনসমর্থনহীন ক্ষুদ্র এমন একটি দলকে বিরোধী দল বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে যে কিনা নির্বাচনে ২৩৬টি পৌর সভা চেয়ারম্যানের পদের মধ্যে একটি মাত্র পদে জয়লাভ করেছে। আরো অবাক ব্যাপার হলো, সেই দলের যিনি প্রধান তিনি নিজেই বলেন, আমাদের দলের নাম শুনলে লোকে হাসাহাসি করে। তিনি আরো বলেন,  লোকে তাদের ভোট দেয় না। কারণ তারা তো সরকারকে সমর্থন করে তাই তাদেরকে ভোট না দিয়ে তারা বরং সেই ভোটটি সরকারদলীয় বাক্সেই দেয়। আর ঐ দিকে যেটি আসল বিরোধী দল, যারা একদিনের নোটিশে কোনো জনসভা অনুষ্ঠান করলে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত হয়, তাকে সভা, মিছিল-মিটিং তো দূরের কথা, সেমিনার বা মানব বন্ধনও করতে দেয়া হয় না।
বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের বক্তব্য সত্য হোক আর নাই হোক অন্যান্য দেশে কিন্তু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বাদের জন্ম সেইভাবেই হয়েছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর এমনকি সিরিয়ায় এবং ইরাকেও দেখা যায় যে, ঐসব দেশে বিদেশীরা এসে তাদের দেশ জবর-দখল করে রেখেছে। সেই জবর-দখলের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সুযোগ জনগণকে দেয়া হচ্ছে না। মতামত প্রকাশের কোনোরকম সুযোগ না থাকায় ঐসব দেশে জন্ম হয়েছে জয়শে মোহাম্মদ, আল কায়দা, তালেবান এবং আইএসের মতো সংগঠনের। আজ যদি কাশ্মিরীরা গণভোটের অধিকার পেত, ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে হানাদার দখলদার বাহিনী চলে যেত, এবং জনগণ নিজস্ব স্বাধীন মতামত অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করতে পারতো, তাহলে ঐসব দেশে জঙ্গিবাদের উদ্ভব ঘটতো না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটি সমভাবে প্রযোজ্য।এখানে বিদেশের মতো বৃহৎ মাত্রার জঙ্গিবাদী তৎপরতা নাই। যে দুই চারটি ছোটখাটো তৎপরতা দেখা যায় সেইগুলোও নির্মূল হবে যদি এদেশে গণতান্ত্রিক এবং নিয়মন্ত্রাতিক রাজনীতির চর্চা থাকে, সব শ্রেণীর জনগণকে অবাধ এবং স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়, যদি পাইকারী হারে রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং নিপীড়ন বন্ধ হয় এবং ক্রস ফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মী নিধনের খারাপ প্র্যাকটিসকে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া যায়।   

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Faisal ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ২:৪০ পিএম says : 0
you are right
Total Reply(0)
Babul ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৩:০১ পিএম says : 0
ata americar kono chal kina seta o dekha uchit
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন