কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে রেফারাল পদ্ধতিতে গ্রাহক সংগ্রহ করে হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভূঁইফোড় ওই মাল্টিপারপাস সোসাইটি।
জানা যায়, টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর নান্নু মার্কেটের ‘এ’ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দোতলায় কর্ণফুলী মাল্টিপারপাসের কার্যালয় ঘেরাও করেন শতাধিক গ্রাহক। এ সময় আলোচনার কথা বলে কয়েকজন গ্রাহককে ওই কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে তাদের মারধর করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটিতে ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) করেছিলেন পোশাক কারখানার কর্মী মাজেদ আক্তার রূপা। চলতি বছরে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা জমার পাঁচ বছরের ডিপিএসের মেয়াদ সম্পন্ন হয়। তিনি টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ৮ থেকে ৯ মাস ধরে তাকে ঘোরাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভুক্তভোগী রূপা বলেন, গতকাল আমার ডিপিএসের টাকা ফেরত দেবে বলে তারিখ দেয় কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস। আমি অফিসে এসে টাকা চাই।
ওই অফিসের কর্মকর্তা কাজল আমাকে বলেন, ১৯ নভেম্বর তোমার টাকা দেওয়া হবে। আমাকে বড় স্যার (জসিম) যেভাবে বলছেন আমি তাই তোমাকে বলছি। আমি তখন তাদেরকে বলি, প্রতি মাসে তারিখ দিয়ে আমাকে কেন ঘুরাচ্ছেন? তখন ওই অফিসের সুমি নামে এক কর্মচারী আমাকে চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেন। আমি উঠে দাঁড়ালে পরে আরও ৫ থেকে ৬ জন নারী আমার হাত ধরে আটকে রাখে। আর (সুমি) ওই নারী চুল ধরে আমাকে মারতে থাকেন।
তিনি বলেন, আমি গার্মেন্টসে কাজ করে অনেক কষ্ট করে টাকাগুলো জমিয়েছি। উনাদের সঙ্গে আমার কোন ঝামেলা হয়নি। তারা যেভাবে আমাকে টাকা ফেরত দিতে চেয়েছে আমি সেভাবেই নিতে চেয়েছিলাম। টাকা চাইতে এসেছি বলে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আমার ওপর অত্যাচার করেছেন। আমি আমার কষ্টের উপার্জিত টাকা ফেরত চাই ও আমার ওপর অত্যাচারের বিচার চাই।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো গ্রাহক যদি অন্য গ্রাহককে রেফার করে তবে, তারা একটি নির্দিষ্ট অংকের কমিশন পান। শুধু তাই নয়, ১৫ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা গ্রাহকের সন্ধানও পাওয়া গেছে। যাদের প্রতি লাখে এক হাজার নয়শ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান মহামারি করোনার দোহাই দিয়ে টাকা দেওয়া বন্ধ রাখে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি।
এছাড়া ৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস প্রকল্প রয়েছে ওই সোসাইটির। মাসে মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা রাখার বিনিময়ে মেয়াদ শেষে লাভসহ মূল টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু, এমনও গ্রাহক রয়েছেন যারা, ২ বছর ধরে ঘুরেও ভূঁইফোড় ওই মাল্টিপারপাস সোসাইটি থেকে তাদের সারা জীবনের জমানো সঞ্চয় ফেরত পাচ্ছেন না। বরং, টাকা চাইতে গেলে মারধরের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ভুক্তভোগী আরেক গ্রাহক পলি আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে টাকার জন্য কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির পেছনে ঘুরছি। আমি গার্মেন্টসে কাজ করি। আমার স্বামী রিকশা চালান। আমাদের দুইজনের সঞ্চয় মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কর্ণফুলীর কাছে পাই। টাকা চাইতে গেলে আমার স্বামীকে অনেক মারধর করেছেন কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তারা। আমি তাকে বাঁচাতে গেলে, আমাকেও রক্তাক্ত করে। আমি বাধ্য হয়ে দুই মাস আগে পল্লবী থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
ভুক্তভোগী ওই গ্রাহক বলেন, ছয়মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও আমার টাকা ফিরত পাইনি। আমার টাকা ফেরত ও আমাদের যারা মারধর করছেন তাদের বিচার চাই।
ওই প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগও গ্রাহক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত হওয়ার কারণে কোথাও গিয়ে বিচার পাচ্ছেন না বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। এমন কি কর্ণফুলী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের এবং পুলিশি হয়রানির ভয় দেখাচ্ছে। একইসঙ্গে প্রভাবশালীরা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে টাকা তুলে দেওয়ার চুক্তিও করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাসের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. শাকিল আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার এসআই কাওছার মাহমুদ বলেন, চলতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির নামে দুইটি জিডি হয়েছে। যেদিন জিডি হয়েছিল সেদিন ওই অফিসে গিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গ্রাহকদের টাকা দিয়ে দেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন