স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৮০০ শ্রমিক চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। ৫৯ বছর বয়স হওয়ার কারণ দেখিয়ে পরিচ্ছন্ন বিভাগের এসব শ্রমিক নতুন পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্ত না করায় এ আশঙ্কায় ভুগছেন তারা। ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সরকারি অফিসের পিওনরাও অবসরে গেলে নানা সুযোগ সুবিধা পান। কিন্তু পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অবসরে যেতে হয় সম্পূর্ণ খালি হাতে। চাকরি চলে গেলে অনেক অসুবিধায় পড়তে হবে তাদের।
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকার ঘোষিত বেতন স্কেল কার্যকর হয়েছে বছর খানেক আগে। তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গত মাস থেকে নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন পাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু গত মাসে দেয়া বেতন অনুসারে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সাড়ে পাঁচশ’ এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ২১০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী বাড়তি হারে বেতন পায়নি। ৫৯ বছর বয়স হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন দেয়নি বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। তবে তাদেরকে পুরাতন স্কেল অনুসারে বেতন দেয়া হয়েছে। কম বয়সীরা তাদের থেকে বেশি বেতন পেলেও কম বেতন নিয়েই তাদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন এ শ্রমিকরা। ইতোপূর্বে পরিচ্ছন্ন বিভাগে বয়সজনিত কারণে ছাঁটাই হওয়ার কোন নজির নেই। অনেক বয়স্করাও স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে কাজ করে থাকেন। কিন্তু নতুন বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর আশংকা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে যেভাবে ৫৯ বছর বয়স হওয়ার পর অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হয়, সেভাবে তাদেরও চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে। ইতোপূর্বে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কোন শ্রমিক মারা গেলে দক্ষিণ সিটি থেকে ৫০ হাজার টাকা এককালীন দেয়া হত। কিন্তু বর্তমানে নানা অজুহাতে তাও দেয়া হয়না বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। তবে উত্তর সিটির পক্ষ থেকে কোন শ্রমিক মারা গেলে তাকে এক লাখ টাকা দেয়া হয় বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। তাছাড়া দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে চাকরি চলে গেলেও কোন সুবিধা পাননা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এ কারণে চাকরি চলে গেলে সম্পূর্ণ বেকার হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কলোনিতে থাকা এসব শ্রমিককে বাসাও ছাড়তে হবে। তখন একদিকে বেকার অন্যদিকে রাজধানীতে উচ্চমূল্যে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে। এসব আশংকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব শ্রমিক।
আব্দুল মতিন ও তার স্ত্রী সূর্য বানু দু’জনেই দক্ষিণ সিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু তাদের দুজনেরই ৫৯ বছর বয়সজনিত কারণে নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়নি। সূর্য বানু কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামীর কিছুদিন আগে স্ট্রোক হয়েছে। অপারেশন করা হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন চাকরি চলে গেলে খামু কী? সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী না হলেও যেন কিছু বেতন বাড়িয়ে দেয়। না হলে এত কম বেতনে বাঁচা যাবে না।
তার মতো ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রনাথ দাস, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া বেগম একই রকম হতাশার কথা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তারা মুষড়ে পড়েছেন বলেও জানান।
পরিচ্ছন্ন কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ঢাকা দক্ষিণ স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, সিটি কর্পোরেশন অবসরকালীন বয়সের বিষয়টি মানলেও সে অনুযায়ী সুবিধা দিচ্ছে না। অবসর দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দেখাদেখি দক্ষিণও বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। একযোগে সাড়ে পাঁচশ’ কর্মী চলে গেলে সিটির পরিচ্ছন্ন কাজে সমস্যা দেখা দেবে বলেও জানান তিনি।
উত্তর সিটির স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ২১০ জন শ্রমিক ৫৯ বছর বয়সজনিত কারণে নতুন পে-স্কেল পাননি। এ কারণে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। চাকরি চলে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা। তিনি বলেন, সরকারি অফিসের পিওনরা অবসরে গেলে ১৫/২০ লাখ টাকা পান। কিন্তু আমাদের সম্পূর্ণ খালি হাতে যেতে হয়। এ ব্যাপারে মেয়র আনিসুল হকের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটির সচিব খান মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ৫৯ বছর বয়স হওয়ার কারণে যাদের নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়নি, তাদের আগের স্কেল দেয়ার সময়ই চিঠিতে জানানো হয়েছিল। তারপরও মেয়র সাঈদ খোকন তাদের ব্যাপারে আন্তরিক। এ কারণে তাদের এখনো বাদ দেয়া হয়নি। পুরাতন স্কেল অনুযায়ী তাদের বেতন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একসাথে এত শ্রমিক চলে গেলে সমস্যা হবে, এজন্য মেয়রও বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছেন কিভাবে তাদের রাখা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন