উওরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের অর্ন্তভুক্ত হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছরেও গঠিত হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিট। কৃষি ভিওিক এলাকা হওয়াতে বিভিন্ন জায়গায় ধান চাষের পাশাপাশি মৎস চাষে ছোট ছোট পুকুর খনন করে থাকে যাতে তাদের জীবিকা নির্বাহে কাজে দেয়। কিন্তু এসব পুকুরসহ, বিভিন্ন নদীতে প্রায়ই মানুষ ডুবে যায়।
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেই চারজন পানিতে ডুবে মারা যায়। এর কারণ হিসেবে যা সামনে উঠে আসে পানিতে পড়ে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। এতে স্বজন হারানো পরিবারের আহাজারি যেমন দীর্ঘ হচ্ছে, একই সাথে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে উদ্ধার কাজে নিয়োজিতদের।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় থাকা রেসকিউ বিভাগ অর্ন্তভুক্ত হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ঠাকুরগাঁওয়ের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম ১৯৬৯ সালে শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে জেলার চারটি উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মিত হয়।এ সব স্টেশনে কর্মকর্তা -কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৪৩টি। কিন্তু স্টেশন গুলোতে নেই কোন ডুবুরির পদ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয়রা জাল ফেলে কিংবা দড়ি টেনে উদ্ধারের চেষ্টা চালান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নে ইব্রাহিম খলিল নামে এক শিশু ও ১৪ই সেপ্টেম্বর হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী সীমান্ত এলাকার নাগর নদীতে ডুবে মারা যায়। স্থানীয়রা দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে রংপুর থেকে ডুবুরিদল ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে সন্ধ্যায় লাশ গুলো ভেসে উঠে। উদ্ধারকাজে সহায়তা করা স্থানীয় কয়েকজন জানান, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা অনেক পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এর আগে আমরা ৮-১০ জন পানিতে নেমে তাদের লাশ খোঁজ করতে শুরু করি। পরে ওই দুই নারীর লাশ উদ্ধার করি। ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা এখানকার নদী-গুলোতে প্রায়ই ডুবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু উপজেলায় ও জেলাতে ডুবুরি দল না থাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক সময় ডুবে যাওয়া মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, জেলায় ৮শ’৮ কিলোমিটার নদী পথ রয়েছে। ছোট বড় নদীর সংখ্যা রয়েছে ১৫টি। শুষ্ক মৌসুম বাদে এ নদী গুলোতে ২৫-৩০ শতাংশ পানি থাকে। কয়েকটি নদীতে নৌকা চলাচল করে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের তথ্যমতে, গত বছর ২০২০ ও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪টি ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। জীবিত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সরোয়ার হোসাইন বলেন, পুরো রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য ডুবুরি সদস্য রয়েছে চার জন। এই সদস্যদের নিয়েই পুরো রংপুর বিভাগের উদ্ধার কাজ পরিচালিত হয়। অনেক সময় একটি অভিযান চালানোর সময় আরেক জায়গায় ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। তখন পরিস্থিতি সামলাতে খুবই হিমশিম খেতে হয় ।
স্থানীয়রা ইনকিলাব কে জানান, ঠাকুরগাঁয়ে একদিকে নেই কোন সুইমিংপুল যেখানে সাঁতার শিখতে পারবে তারা, এর ফলে অনেক সময় শখের বসেও কেউ কেউ নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা যায়। পাশাপাশি আমাদের জেলায় নেই কোন ডুবুরি ইউনিট, এর ফলে পানিতে পড়ে নিখোঁজ ব্যক্তি উদ্ধার কাজে সময় নষ্ট হয় প্রতি জেলাতে একটি করে ডুবুরি ইউনিট থাকা প্রয়োজন।
জেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো.ফরহাদ হোসাইন বলেন, জেলার ফায়ার সার্ভিসে কোনো ডুবুরির পদই নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডুবুরি নিয়োগের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাবনা দিয়েছি। প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়ন হলে উদ্ধার অভিযানে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন