আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়নসহ পাঁচ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে আদালতে। আবার, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে ফের সক্রিয় ছাত্রলীগের দু’পক্ষ। গত ৩১ আগস্ট খুন হন মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রোহান। এসবের নেপথ্যে রয়েছে আধিপত্যের রাজনীতি, মাদক বিকিকিনির নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডার বাণিজ্য ও ভাগবাটোয়ারা। ছাত্ররাজনীতিতে সহাবস্থান না থাকায় খুলনায় ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগই। এ অবস্থায় দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে আজ (রোববার) থেকেই। তবে শিক্ষার্থীদের মনে রয়েছে সংঘর্ষের অজানা আতঙ্ক। আবার দুর্বৃত্তদের বার বার জীবন নাশের হুমকির ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠন, মাদক সেবন ও বিক্রির বিরোধে ছাত্রলীগের দু’গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ৬ অক্টোবর আদালতে মামলা হয়। খুলনা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত-১-এ আহত শিক্ষার্থী মুন্সী আশিকুজ্জামান কমল বাদী হয়ে করা মামলায় কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়নসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান, কুয়েট ছাত্রলীগের সম্পাদক দীপঙ্কর দাশ, বঙ্গবন্ধু হলের সহ-সভাপতি মাহামুদুল হাসান সজীব ও আদীশ চাকমা। মামলায় সাক্ষী ছাত্রলীগের আট নেতা হলেন- নূর এ জিমি রাজ, আশরাফুল, মাহাবুব, রাকিন নাবিউল, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, এমএম ফিরোজ ইসলাম, শাহজাদ কবির তাসিব ও মাহীর মুন্সী।
আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়েছেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে মাদক বিকিকিনি নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডার বাণিজ্য ও ভাগবাটোয়ারা। ছাত্রলীগের আড্ডা ও মহড়ায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কায় ভুগছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ, খুলনা মেডিকেল কলেজে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল। খুলনা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, হোস্টেল, হাসপাতালের খাবার, ওষুধ, মেডিকেল সরঞ্জামসহ বিবিধ পণ্যসামগ্রী সরবরাহের দরপত্র, হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম কারণ। তাছাড়া হাসপাতাল, কলেজ ও হোস্টেল সীমানায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারাও আধিপত্য বিস্তারের বিশেষ কারণ বলছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসাদুজ্জামান রাসেল বলেন, খুমেক ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে ঠিকই। তবে মেডিকেল ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতেই ফেস্টুন, ব্যানার ও প্যান্ডেল করা হয়েছিল। এটি ক্যাম্পাসের রাজনীতির বিষয় নয়। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি ও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষেও সাথে আলাপ-আলোচনা করে সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী ছেলেদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের চেষ্টা করছি। বর্তমানে সংগঠনের মধ্যে কোন গ্রæপিং নেই। ফলে আধিপত্য বিস্তার চেষ্টার প্রশ্ন আসে না। এখন সম্মিলিতভাবে সকলে মিলে একযোগে দলীয় কর্মকাÐে অংশ নেয়ার সাথে সংগঠনের সকল কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। অচিরেই নগরভুক্ত সকল থানা ও কলেজ কমিটি গঠন করা হবে।
অপরদিকে, গত ২ অক্টোবর ছাত্রলীগ নেতা কাজী আহাদুজ্জামান ডলারের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল ও সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আহাদুজ্জামান ডলারকে হত্যার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ডলার (যার নং-২০৬)।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৮ জুন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান রাসেলের নাম ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে নগরের পাঁচ থানা ও ১২টি কলেজ কমিটির মধ্যে শুধুমাত্র বিএল কলেজে ৫ সদস্যের আহŸায়ক কমিটি, সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি রয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট রাতে সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সৈকত হাসান রোহানের (২৫) হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় প্রথম অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করলেও পরে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেডএ মাহমুদ ডনসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১১ জনের নাম অন্তর্ভুক্তের দাবি জানান নিহতের মা রাশিদা বেগম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন