আজকের যুগ হলো প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে সেই জাতিই এগিয়ে থাকবে যে জাতির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বেশি। প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ এ দুটি একে অপরের অনুষঙ্গ। যে কারণে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের আমলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যে দেশে ২০০৯ সালের আগে বিদ্যুৎ সংকটে দেশের অনেক এলাকা হারিকেনের যুগ ফিরে যাচ্ছিল, সে দেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা প্রায় অসম্ভব হলেও তা এখন সত্য হতে বসেছে। ২০০৯ সালে দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ ছিল বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। গড়ে অর্ধেক সময় লোডশেডিং ছিল নিয়তির লিখন। এক যুগ পর দুর্গম চরসহ সারাদেশের ৯৯.৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। লোডশেডিংয়ের লজ্জা এখন বিরল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে ৭৭৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন করা পাঁচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩৪০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২, মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাগেরহাটের মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সিলেটে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ২২৫ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নীতকরণ।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার এ পর্যন্ত ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও শিল্প স্থাপনের সুবিধা সৃষ্টি করবে। দেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। সে সময় সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। দেশ আজ সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। শুধু উৎপাদনই নয়, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি এখন শেষ পর্যায়ে। নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন দ্বীপভূমিতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
দেশে কর্মক্ষম যুবক শ্রেণির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন প্রয়োজন। আর শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অবকাঠামোগত সুবিধা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা। একসময় এ দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি প্রধান দাবি ছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেই দাবি পূরণ করা হয়েছে। শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের গতি বেড়েছে। তদুপরি এলএনজি আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। মহাসড়কগুলোকে চার লেন, আট লেন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী নদীতে টানেলওয়ে নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। নদী খননের মাধ্যমে নৌপথের উন্নয়ন করা হচ্ছে। নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বিদ্যমান বন্দরগুলোর সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে। অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে শিল্পায়নও দ্রুততর হচ্ছে। শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগই নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও গতি আসছে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং তা বাড়তেই থাকবে। মেট্রোরেল বিদ্যুতে চলবে এবং ক্রমে পুরো রেলব্যবস্থাকে বিদ্যুতায়িত করার লক্ষ্য রয়েছে। যানবাহনও ক্রমেই বিদ্যুৎচালিত হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিল্পায়নও দ্রুত এগোতে থাকবে। বাড়ছে ব্যক্তি পর্যায়ের বিদ্যুতের চাহিদাও। তাই এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে এগিয়ে নিতে হবে এবং সেভাবেই এগিয়ে চলেছে বিদ্যুৎ পরিকল্পনা। এরপর গ্রিডে আসবে রূপপুরের পরমাণুবিদ্যুৎ। তৈরি হচ্ছে মাতারবাড়ী ও পায়রায় বিদ্যুৎ হাবসহ আরো অনেক উদ্যোগ। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎসহ অন্যান্য উদ্যোগও এগিয়ে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সূচিত হয়েছে তা সঠিকভাবেই এগিয়ে যাবে।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন