ত্বকের যেসব সমস্যা আছে তাদের মধ্যে অতি পরিচিত ও অন্যতম সমস্যা হলো ব্রণ। ব্রণ প্রথম দেখা যায় বয়ঃসন্ধির সময়। এ সময়ে হরমোনের ক্ষরণ মাত্রার ভারসাম্যের অভাবে ত্বকের তেলগ্রন্থি ও সেবাম ক্ষরণ বেড়ে যায়। এতে লোমকুপ গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায়ই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করে। এভাবে জীবাণুর বিষক্রিয়ায় ত্বক ফুলে উঠে যাকে ব্রণ বলে।
জীবাণুঃ
ব্রণের জীবাণুর নাম হলো প্রোপাইনো ব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে।
কাদের বেশী হয় ?
ব্রণ যেকোন বয়সেই হতে পারে। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৯ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সেই ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ করা যায়। তবে ৮০ ভাগের ক্ষেত্রে ২০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রণ হওয়ার হার কমতে থাকে। তবে অনেকের ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত রোগটি হত্তয়ার প্রবণতা থাকে। আবার কারো অনেক বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কোথায় হয় ?
ব্রণ সাধারণত মুখেই বেশি দেখা যায়। তবে রোগটি ঘাড়, বুক ও পিঠেও হতে পারে।
কারণঃ
১. গরমকালে ব্রণের প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ ঘামের কারণে তৈলগ্রন্থির নালী বন্ধ হয়ে ব্রণ হয়।
২. বয়ঃসন্ধিকালে অতিরিক্ত এন্ড্রাজেন হরমোনের নিঃসরণ।
৩. গর্ভাবস্থা ও মাসিকের সময় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, খিঁচুনী বা মানসিক রোগের ঔষধ, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধের কারণ।
৫. অতিরিক্ত আবেগ।
৬. মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব।
৭. কসমেটিকের অধিক ব্যবহার।
৮. মাথার খুশকি ও তেলতেলে চুল, অপরিচ্ছন্ন ত্বক।
৯. কেরোসিন, কয়লা, ফার্ণিচারের বার্ণিশের প্রভাব।
১০. একদিকে কাত হয়ে ঘুমানো।
১১. কোষ্টকাটিন্য, পুষ্টিহীনতা, পানি কম পান করা, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাদ্যাভ্যাস।
১২. ছত্রাক প্রদাহ ইত্যাদি।
প্রকারভেদঃ
১) ট্রপিক্যাল ব্রণ-এ ধরনের ব্রণ অতিরিক্ত গরমে ও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে হয়। এটি সাধারণত পিঠ, উরুতে বেশি হয়।
২) কসমেটিকা ব্রণ- এটি অতিরিক্ত কসমেটিক লাগাতার ব্যবহার করলে মুখে হয়।
৩) প্রিমেন্সট্রুয়াল ব্রণ- এটি কোনো কোনো মহিলার মাসিক শুরুর কিছুদিন আগে দেখা যায়।
৪) ডিটারজিনেবাস ব্রণ- মুখ বারবার সাবান দিয়ে ধুলে এ প্রকার ব্রণ দেখা যায়।
৫) স্টেরয়েড ব্রণ- স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন বা ব্যবহার করল এ জাতীয় ব্রণ দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ
সচেতনার মাধ্যমেই বেশির ভাগ ব্রণ দূর করা যায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্রণের প্রকার আনুষঙ্গিক জটিলতা, রোগীর বয়স এবং সময়কাল বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। লক্ষ রাখতে হবে ব্রণের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। তাই ধৈর্য্য রেখে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধঃ
১. সর্বদা ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে।
২. প্রচুর পরিমানে শাকসবজী ও ফলমূল খেতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৪. দিনে অন্তত ৫ বার পানি দিয়ে মুখ পরিস্কার করতে হবে।
৫. ভাজাপোড়া না খাওয়াই ভালো।
৬. পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুমের কারণে ব্রণ হয়।
৭. দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে।
৮. রোদে গেলে সানস্ক্রিণ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
১০. মাথা খুশকিমুক্ত রাখতে হবে।
১১. মানসিক চাপ পরিহার করতে হবে।
ব্রণ হলে যা করবেন নাঃ
১) যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা।
২) ব্রণে হাত লাগানো এবং খুঁটা যাবে না।
৩) এ উদ্বিগ্ন বা ভয়ের কারণ নেই। অনেক সময় উদ্বিগ্নতাই ব্রণের কারণ হতে পারে।
৪) অতিরিক্ত মশলা, ঘি, তেল না খাওয়াই ভালো।
৫) চুলে এমনভাবে তেল দিতে হবে যেন মুখ তেলতেলে না হয়।
৬) নিজের পছন্দমত কোন ঔষধ নাগানো যাবে না।
৭) উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, তেলযুক্ত খাবার পরিহার করা।
৮) আয়োডিনযুক্ত খাবার, যেমন-সমাদ্রিক শৈবাল, গরুর কলিজা, রসুন এড়িয়ে চলতে হবে।
মোঃ হুমায়ুন কবীর
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য নিবন্ধকার
রেনেসাঁ হ্যোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেট
চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন