এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। অটোইমিউন ডিজিজে নিজের রোগ প্রতিরোধকারী রক্তকণিকা নিজের কোষকেই আক্রান্ত করে। এই রোগের নাম জগরেন’স সিনড্রোম জগরেন’স সিনড্রোমে ইমিউন সেল লালাগ্রন্থি এবং অশ্রুগ্রন্থিকে আক্রমণ করে সেগুলোকে ধ্বংস করে।
জগরেন’স সিনড্রোমের সাথে রিউম্যাটিক ডিজিজ যেমন রিউম্যাটরেড অর্থ্রাইটিসের সম্পর্ক আছে। এ সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে মুখের ভেতর এবং চোখ শুকনো হয়ে যায়। এছাড়া এ ডিজঅর্ডারে কিডনি, রক্তনালি, ফুসফুস, লিভার, প্যানক্রিয়াস এবং ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আমেরিকাতে প্রচুর এ সিনড্রোমের রোগী দেখা যায়। সাধারণত চল্লিশ বছরের পরে এমনটি হয়। মেয়েদের জগ্রেন’স সিনড্রোম হবার সম্ভাবনা ছেলেদের থেকে ৯ গুণ বেশি।
উপসর্গ :
১। শুকনো চোখ।
২। মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়।
৩। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়।
৪। লালাগ্রন্থি ফুলে যায়।
৫। ক্লান্তিভাব থাকে।
৬। শুকনো কাশি থাকতে পারে দীর্ঘদিন।
৭। যোনী শুষ্ক হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় : জগ্রেন’স সিনড্রোম ডায়াগনসিস একটু কঠিন। কারণ উপসর্গ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না এবং অনেক অসুখের উপসর্গের সাথে এ অসুখের মিল আছে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সাথেও জগ্রেন’স সিনড্রোমের মিল আছে। সিবিসি, ব্লাড সুগার, লিভার এবং কিডনির পরীক্ষা করা হয়। এতে সিনড্রোমটি ডায়াগনসিস সহজ হয়। কিছু এন্টিবডি রক্তে পাওয়া গেলে নিশ্চিতভাবে ডায়াগনসিস করা যায়। এছাড়া চোখ পরীক্ষা করা হয় এবং লালাগ্রন্থির বিভিন্ন পরীক্ষা করা যেতে পারে। একেবারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য লালাগ্রন্থির বায়োপসি করা হয়।
চিকিৎসা : জগ্রেন’স সিনড্রোমের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো লালা নিঃসরণ বাড়ায়। এসব ওষুধের মধ্যে আছে পাইলোকার্পিন এবং সেভিমেলিন। চোখ যেহেতু শুকনো থাকে তাই কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা হয়। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকলে চিকিৎসকরা এনএসএআইডি ব্যবহার করেন। খুব বেশি জটিলতা হলে কর্টিকোস্টেরয়েড এবং ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। জগরেন’স সিনড্রোম থেকে কিছু জটিলতা হতে পারে। দাঁতে গর্ত হয়ে যেতে পারে এবং ছত্রাকের সংক্রমণ বেড়ে যায়। যেহেতু অশ্রæগ্রন্থি কাজ করে না তাই চোখে দেখতে সমস্যা হয়। তবে সঠিক চিকিৎসা হলে রোগী অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পাড়ি দিতে পারে।
ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন