ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ শুধুই মুসলমানদের পবিত্র স্থান, এর সাথে ইহুদী ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই বলে ইউনেস্কো একটি প্রস্তাব পাস করেছে। গত ১৩ অক্টোবর পাসকৃত প্রস্তাবটিতে বলা হয়, জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের ওপর ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই, আল-আকসা মুসলমানদের পবিত্র স্থান। একই সাথে জেরুজালেমের আল কুদস এলাকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক এ সংস্থাটি। ইউনেস্কোর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন। অপরদিকে ইউনেস্কোর এ প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব নাটকের বাক্স’ বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও বিশ্বসমাজে সর্বজনবিদিত যে, আল-আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও পবিত্র মসজিদ। যদিও এটিকে সিনাগগ বা ইহুদী মন্দির দাবি করে ইসরাইল অন্যায় আগ্রাসন ও মানবতাবিরোধী আচরণ করে যাচ্ছে। মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, মুসলিমদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদকে ইহুদীদের পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ইউনেস্কো অবাস্তবতার মঞ্চে পরিণত হয়েছে এবং আরেকটি ভ্রমাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুসলিমদের কাছে আল-আকসা মসজিদ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত।
মিডল ইস্ট মনিটর পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ১৩ অক্টোবর প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতরে আল-আকসা মসজিদ ইস্যুতে ইসরাইল বিরোধী প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে চীন, রাশিয়া, ইরানসহ ২৪ টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানীসহ ৬ টি দেশ ভোট দেয় প্রস্তাবের বিপক্ষে। আর ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ২৬ টি দেশ। প্রস্তাবে মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও বর্তমানে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদ এলাকায় ইসরাইলি সৈন্যদের অবরোধ এবং ওই এলাকার মুসলমানদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না দেয়ার তীব্র সমালোচনা করা হয়। প্রস্তাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আল-আকসা মসজিদের সাথে ইহুদীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, এ স্পষ্ট কথাটি। এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একে তেলআবিবের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিন। আল-আকসা মসজিদের ব্যাপারে ইউনেস্কো যে প্রস্তাব পাস করেছে তা ইতিহাসসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর প্রতিটি সত্যনিষ্ঠ মানুষ এ প্রস্তাবকে সমর্থন করবে, এটাই বিশ্ববিবেকের প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধিকৃত এলাকা থেকে ইসরাইলি অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্তের প্রতি ইসরাইল শ্রদ্ধাশীল হয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, ইসরাইলের অতীত আচরণ যুক্তি ও শান্তির সপক্ষে ছিল না। ইসরাইল গায়ের জোরে সবসময় শুধু নিজের স্বার্থই চরিতার্থ করেছে। নিজের দখল ও জেদ বজায় রাখতে সে বিশ্ববিবেকের উপর পদাঘাত করে অন্যায়ের বুলডোজার চালাতে কোনদিনই কুণ্ঠিত হয়নি। মিথ্যা দাবি ও অমানবিক উদ্দেশ্য হাসিলে তার নিষ্ঠুর আগ্রাসনের কথা কারো অজানা নেই।
ইসলামের নবী শুরুতে কিছুদিন আল-আকসার দিকে ফিরেই ইবাদত করেছেন। মদীনায় হিজরতের বছর দুই পর কিবলা পরিবর্তিত হয়ে কা’বা শরীফ কিবলা সাব্যস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আল-আকসাই ছিল মুসলমানদের কিবলা। এ জন্য একে প্রথম কিবলা বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা পবিত্র ও মর্যাদাশীল মসজিদের মধ্যে প্রথম মক্কার কা’বা শরীফ, দ্বিতীয় মদীনার মসজিদে নববী ও তৃতীয় জেরুজালেমের আল-আকসা মুসলমানদের নিকট স্বীকৃত। হযরত ওমর (রা.) কর্তৃক ফিলিস্তিন বিজয়ের সময় থেকে এ মসজিদ মুসলমানদের। এর মধ্যে ক্রুসেডারদের হাত থেকে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি এটি মুক্ত করেন। ইহুদী আগ্রাসনের সময় পর্যন্ত এটি মুসলমানদের মসজিদ। নবী করীম (সা.) মিরাজ গমনের সময় আল-আকসায় অতীতের সব নবী-রাসূলের জামাতে ইমাম হয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। ঐতিহাসিকভাবেই এটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান। ইহুদীদের সাথে এর কোন ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক সংশ্লিষ্টতা নেই। ইউনেস্কোর এ প্রস্তাব ও বিশ্ব সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত সিদ্ধান্তে এ সত্যই সুপ্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হলো। এখন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃত বক্তব্য ও তাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা থেকে যদিও খুব একটা আশার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু বিশ্ব সমাজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্বের সব জাতি রাষ্ট্র ও শক্তির নৈতিক দায় এ কথাই বলবে যে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। মুসলমানরা তাদের পবিত্র ভূমি, প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ দ্রুত ফিরে পাক, শান্তিপ্রিয় বিশ্বমানবতার এটাই একান্ত প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন