শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই

হতাশায় জেলেরা

রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

পদ্মায় ইলিশ নেই। দিন দশেক হলো ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। তিন সপ্তাহ অপেক্ষার পর জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নেমেছে ইলিশ ধরতে। কিন্তু প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা নেই। খুব কম জেলের ভাগ্যে জুটছে দু’চারটি ইলিশ। তাও আবার পেটে ডিম ভরা। ছোট আকারের ইলিশও মিলছে কিছু।
নদী থেকে অন্য মাছও হারিয়ে গেছে। দিনভর নৌকা জাল নিয়ে নদী চষে ফিরে মিলছে ছোট আকারের বাঘাইড়, রিঠা, পাঙাশ, ঘেড়ে, বেলে, পাতাশী মাছ। কারো জালে দু’একটা কাতল ধরা পড়ছে। ইলিশ ধরতে গিয়ে এখন ধরতে হচ্ছে অন্য মাছ। নৌকা-জালের খরচও উঠছে না।
ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ গলিয়ে আসা গঙ্গা নদী এপারে নাম ধারণ করেছে পদ্মা। সেই পদ্মায় এক সময়ের ইলিশ আর তার স্বাদ-গন্ধ এখন অতীত। ফারাক্কা মেরে ফেলেছে পদ্মাকে। বন্ধ হয়ে গেছে ইলিশের আনোগোনা। চুক্তি মোতাবেক পানি না দিলেও প্রতিবছর বর্ষা মওসুমে এপারে ঘোলা পানির সাথে ঠেলে দেয়া হয় বিপুল পরিমাণ বালি। সেই বালি একটু একটু করে জমতে জমতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়েছে আঠারো ফুট। নদী হারিয়েছে নাব্য। নদী মরে যাবার সাথে সাথে হারিয়েছে জীব বৈচিত্র্য আর নানা প্রজাতির মাছ, শুশক, ঘড়িয়াল।
বাপদাদার পেশা বদলেছে জেলে সম্প্রদায়। যারা এখনো রয়েছে তারাও খুব একটা ভাল নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ (পদ্মা নদীর যাত্রা শুরু), রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট, বাঘা, নাটোরের লালপুর ও পাবনার ঈশ্বরদী হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায় নদীতে মাছের দুরবস্থার কথা। জেলেদের কথা, ইলিশ তো দূরে থাক অন্যান্য মাছেরও আকাল চলছে।
রাজশাহীর ইলিশের আড়ৎ নিউ মার্কেটের পাশের আড়তে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে খুব একটা হাঁক ডাক নেই। বড় বাজার সাহেব বাজারে কিছু ইলিশ দেখা গেলেও সবই সাগর কিংবা বরিশালের এবং সেগুলো নিষেধাজ্ঞার আগে ধরা। আবার নিষেধাজ্ঞার মাঝেও লুকিয়ে ধরা মাছ যা বরফ দিয়ে রাখা। এসব মাছ এখন সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মাছের বেশিরভাগ নরম। স্বাদও নেই। কিন্তু দামের কমতি নেই। আধা কেজি হতে পৌনে এক কেজি সাইজের এসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ছয়শো হতে আকার ভেদে হাজার টাকার মধ্যে।
মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল বলেন, টাটকা মাছের সরবরাহ নেই। ফলে দাম চড়াই থাকছে। সাগর থেকে ফিরলে হয়তো মাছের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কিছুটা কমলেও কমতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল বলেন, আগে এ মওসুমে দশ পনেরটা ইলিশ কিনে ফ্রিজে রাখতাম। বছরের অন্য সময় খাওয়া আর মেহমানদারী করা হতো। এবার এখন পর্যন্ত একটা মাছ কিনে রাখতে পারেননি।
রাজশাহীর চারঘাটের জেলেরা বলছেন, এবারের মত ইলিশের আকাল অতীতে আর কখনো দেখেননি। পিরোজপুরের মোজাম্মেল বলেন, নিষেধাজ্ঞা অবসানের পর নদীতে জাল নিয়ে নেমে প্রায় খালি হাতে ফিরছেন। সেখানকার বাজারের মোস্তাকিম বলেন, প্রত্যেক বছর নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে পরদিন থেকে বাজারে ইলিশ আসতে থাকে। এবারের চিত্র ভিন্ন।
বাঘার চক রাজাপুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ওলিউর রহমান বলেন ইলিশ নিয়ে হতাশার কথা। তবে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশ কিছু জেলে ইলিশ ধরেছে। মৎস্য বিভাগের অভিযানে তাদের জালও খোয়া গেছে। মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নেমেছে। কিন্তু প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা নেই। কিছু জাটকা সাইজের মিলছে। তবে এখন জাটকা ধরার ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন