শওকত আলম পলাশ
ঢাকায় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬’ শীর্ষক তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী শুরু হবে আগামী বুধবার। ‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ১৯-২১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এবারের প্রদর্শনী। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবীর বিন আনোয়ার, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বেসিসের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা একেএম শামীম চৌধুরী প্রমুখ। হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন করা হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আইটি এক্সপোতে নেপাল, উগান্ডা, ভুটান, সৌদি আরব, সুরিনাম, ভিয়েতনাম ও মালদ্বীপের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন কল্পকাহিনী নয়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছে। দেশের ৬৫ শতাংশ জনগণের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। আইসিটি খাত তাদের প্রত্যেককে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে। এদের আইসিটি খাতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। দেশের সাইবার জগত্ এখন প্রসারমাণ। সাইবার জগতে দুটি হুমকি আছে। একটি হলো— ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন ও অন্যটি জঙ্গি সন্ত্রাস। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এসব হুমকির জন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার আজ থেকে সাত বছর আগে এ কর্মসূচি শুরু করে। তখন ছিল সেটা মানুষের মন জয় করার পর্ব, এখন এ পর্ব শেষ হয়েছে। চলছে উড্ডয়ন পর্ব। এর পর হবে স্থিতিশীল পর্ব। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে চলছে। ই-গভর্ন্যান্স, মানবসম্পদ, অল কানেক্টিভিটি, ইন্ডস্ট্রি প্রমোশন বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিয়ে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ কাজ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়। এটি এখন বাস্তবতা। বালাদেশের মানুষ এরই মধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। ছাত্র-শিক্ষকের মিলনমেলায় পরিণত হবে ওই তিনদিনের আয়োজন। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্রের আওতায় চলে আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে আইসিটি বিভাগ। তিনি বলেন, সরকার-ব্যক্তিপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করাই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। প্রদর্শনীতে কোনো প্রবেশ ফি নেই। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬ প্রদর্শনীর জন্য ৯ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। গত বছরও একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল।
প্রতিশ্রুতিমূলক অংশগ্রহণ মাইক্রোসফটের
বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতিতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিস্বরুপ এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬-তে অংশ নিচ্ছে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্তর্নিহিত জ্ঞান এবং এ খাতে অর্থনৈতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইটি এক্সপো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড বিশাল ভূমিকা পালন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে উক্ত আয়োজনের ছয়টি সেমিনারে অংশ নিচ্ছে মাইক্রোসফট। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মাইক্রোসফটের ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬-তে শুধু অংশই নিচ্ছেন না, বরং বিভিন্ন সেমিনারে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ব্যক্ত করা বিষয়গুলো বাংলাদেশে কিভাবে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায় তা তুলে ধরবেন। যেসব বিষয়গুলো নিয়ে সেমিনারে আলোচনা করা সেগুলো হচ্ছে- কি নোট স্পিচ বা মূল প্রবন্ধ হিসেবে ‘এডুকেশন ফর এভরি সিটিজেন-বিল্ডিং এ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফর এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং’, এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে আছে ‘বিজনেস মডেল ফর হাই-টেক জোন’, ‘স্মার্ট সিটিজ: হোয়াট ইজ অ্যাপ্রোপ্রিয়েট ফর বাংলাদেশ’, ‘ইনক্লুসিভ থ্রু টেকনোলজিস’, ‘ইম্প্রুভিং বিজনেস অ্যাফিশিয়েন্সি থ্রু আইসিটি’ এবং ‘রোড টু ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এক্সপোর্ট বাই ২০২১’। উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে যারা সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন- মাইক্রোসফট এশিয়া প্যাসিফিকের সাউথ এশিয়া নিউ মার্কেটস বিভাগের চিফ অপারেটিং অফিসার রীনা চ্যাই, অ্যাপাক-এর ডিরেক্টর সেলস লুকাস লু, অ্যাপাক-এর শ্রীকান্ত কাদম্বি, সাউথইস্ট এশিয়া স্পেশালিস্ট সেলস ডিরেক্টর সঞ্জয় পাটেল, অ্যাপাক-এর ডিরেক্টর ডাটা ইনসাইটস এবং অ্যাজিউর অ্যানালিটিক্স ও ডাটা প্ল্যাটফর্মের সেলস ডিরেক্টর অরিজিৎ রায়। এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুতগতিতে যা সত্যিই লক্ষ্যণীয়। এ গতিকে আরো ত্বরাণি¦ত করছে প্রযুক্তিতে দেশের তরুণদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ এবং এ সম্ভবনাময় খাতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ যেখানে মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আইটি বাজার নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাইক্রোসটের পণ্য ও সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাইক্রোসফট অ্যাসোসিয়েশন এবারের ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’-২০১৬-এর গর্বিত স্পন্সর হিসেবে অংশ নিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উচ্চপদস্থ মাইক্রোসফট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। মূল লক্ষ্য একটাই আর তা হলো, আমাদের বিশেষজ্ঞ দল, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন