সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের একজন ক্ষিতিশ চন্দ্র বিশ্বাসের প্রভাবের কথা যেন ওপেন সিক্রেট। তিনি কোম্পানির একজন পরিচালক (প্রজেক্ট এন্ড প্ল্যানিং) হয়েও অদৃশ্য খুঁটির জোরে সর্বক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চেয়েও বেশি প্রভাব খাটিয়ে থাকেন বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে গুঞ্জণ রয়েছে। নিজের পদোন্নতি ছাড়াও কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি ও বদলিসহ সবকিছুই হচ্ছে তার ইশারায়।
নতুন প্লান্টের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ক্ষিতিশ চন্দ্র বিশ্বাস বিশাল অর্থ বৈভবের মালিক হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর মতলবে নতুন আরো একটি বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইচ্ছাকৃত গরিমিসি করে বিলম্ব করছেন বলে তার বিরদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ফলে খোদ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তার ব্যাপারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডে (এপিএসসিএল) প্রশাসনিক প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেও তার কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না। যতক্ষণ পরিচালক ক্ষিতিশ চন্দ্র বিশ্বাস অনুমতি না দেয়। তাই তার উত্থান এপিএসসিএলের সীমানা পেড়িয়ে এখন আশুগঞ্জের মানুষের মুখে মুখে।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, ক্ষিতিশ চন্দ্র বিশ্বাস বিগত ১৯৮৮ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে এপিএসসিএল এ চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১২ সালে তিনি উক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন বিভাগের ব্যবস্থাপক নিযুক্ত হন। তারপর বিগত ৭ বছরের (২০১২-২০১৯) মধ্যেই তিনি পরিচালক (প্রজেক্ট এন্ড প্ল্যানিং) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এসময় তার আগে চাকরিতে যোগদান করা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদকে বাদ দিয়ে ক্ষিতিশ চন্দ্রকে পরিচালক (প্রজেক্ট এন্ড প্ল্যানিং) পদে পদোন্নতি দেয়ায় ২০১৯ সালে আব্দুস সামাদ এপিএসসিএল থেকে চাকরি ছেড়ে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিতে যোগ দেন।

এরই মধ্যে বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আশুগঞ্জ ৪৫০ মেঘাওয়াট (নর্থ) প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর, আশগঞ্জ ৪০০ মেঘাওয়াট সিসিপিপি (ইস্ট) প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে ক্ষিতিশ চন্দ্রকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য তার সমমর্যাদার কর্মকর্তা তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে তার অধীনস্থ করে তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়। এদিকে এপিএসসিএল-এর পূর্ববর্তী ২ জন পরিচালক (প্রজেক্ট এন্ড প্ল্যানিং) জয়নাল আবেদন খান ও অজিত কুমার সরকার ৬০ বছর বয়সে উক্ত চাকরি থেকে অবসর নিলেও ক্ষিতিশ চন্দ্রের চাকরির সুবিধার্থে ২০১৯ সালে বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬২ বছর করা হয়। যা আগামী ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ হবে। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি উক্ত চাকরিতে টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেছেন।
এদিকে, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্ষিতিশ চন্দ্রের বর্তমানে ঢাকার বসুন্ধয়ার ১টি, শ্যামলীতে ১টি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাঞ্চলে ১২ কাঠার ১ টি প্লট ও ভারতের কলকাতায় ১টি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে এক্সিম ব্যাংক ও এবি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে তার ও তার স্ত্রীর নামে কয়েক কোটি টাকার ফিক্স ডিপোজিট রয়েছে বলে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে।

ক্ষিতিশ চন্দ্র বিশ্বাস তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব বিষয় আমাদের বোর্ড দেখবে আপনি জেরা করছেন কেন? তিনি জানান, করোনার কারণে আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট (ইস্ট) প্ল্যান্টের কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্লান্টের কাজে নিয়োজিত চাইনিজরাতো ছুটি পাননি তাহলে করোনার প্রভাব এতটা পড়লো কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরোধীরা আপনাদের কত কথাই বলবে।

এসব বিষয়ে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবতো কিছুটা আছেই। তিনি বলেন, কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা খতিয়ে দেখব। এছাড়া আমাদের যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমাদের বোর্ড রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন