শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সময় বাড়লেও শেষ হয় না কাজ

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েত হয় এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। দু’দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি সড়ক নির্মাণের কাজ। ৯৪০ মিটার নির্মাণাধীন মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ। এ জন্য সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারের অনিয়ম ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে সড়কের সংস্কারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত না হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেশ কয়েকটি কাজের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে বার বার সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ না করা এবং কাজের চূড়ান্ত বিল প্রদান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উন্নয়নবঞ্চিত ওই এলাকার মানুষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে চোখতোলা মাঠে ৯৪০ মিটার সড়কের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহিরুল ইসলাম লিমিটেড। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি কাজটির কার্যাদেশ পায় ওই প্রতিষ্ঠান। ভূগর্ভস্থ টিএন্ডটি তারের কারণে মাঝে কাজটির গতি হারায়। দু’দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের পরেও কাজটি এখনো শেষ হয়নি।
গাংনী আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি করোনার কারণে কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়াতে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া হয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে সরাসরি বাস ধর্মঘট পালন করেছে স্থানীয় বাস মালিক ও বাস শ্রমিক সংগঠনগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজ শেষ না হলেও গত জুন মাসে কাজের চূড়ান্ত বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা যায় কাজ এখনও চলামান। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়াতে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া হয়ে দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষিপণ্য পরিবহনে বেশি খরচ লাগছে, অসুস্থ মানুষকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় প্রায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।
এ বিষয়ে সড়ক জনপথ বিভাগের এক সাবেক কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, উন্নয়নের প্রধান শর্তই হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা, নিবিড় মনিটরিং ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। কাজে বিলম্ব মানেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়। অপ্রীতিকর হলেও সত্য, বাংলাদেশের উন্নয়নকাজে সেটা সড়ক হোক, সেতু হোক বা অবকাঠামো, বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। ব্যয়ভার বাড়ে, জনগণের টাকার অপচয় হয়, শুধু সততা, আন্তরিকতা, দক্ষতা এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে। বাংলাদেশে সব নির্মাণকাজে বিলম্বসময় বৃদ্ধি, বারবার সময় বৃদ্ধি একটি রুটিন সংস্কৃতি। কিন্তু বিলম্বে ঠিকাদারদের জরিমানা হবে ইত্যাদি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই সড়কের কাজে বিলম্ব কেন? কেন বারবার সময় বৃদ্ধি? কেন জনগণের এত ভোগান্তি? তবে স্থানীয় বাসচালক ও যাত্রীদের দাবি মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের নির্মাণে সড়কমন্ত্রীর নিবিড় মনিটরিং দাবি করছি।
এ বিষয়ে মেহেরপুরের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া না গেলেও মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্বীকার করেন কিছু কাজ বাকি থাকলেও ওই কাজগুলোর চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়েছে। এদিকে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি তদন্ত টিম সরেজমিন তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। উপসচিব (বাজেট) মোহাম্মদ আবদুল মুক্তাদির নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিমে আছেন সহকারী প্রকৌশলী অনুপ কুমার পাল। তদন্ত টিম মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়ক, একই সড়কে ব্রিজ নির্মাণ এবং মুজিবনগরে সড়ক নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এ বিষয়ে তদন্ত টিমের প্রধান মোহাম্মদ আবদুল মুক্তাদির জানান, তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। তদন্তে অসংগতি পেলে অবশ্যই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ থাকবে বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন