বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মুঠোফোন ও ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার ভাদুপুর এলাকায় গত রোববার ট্রেনে কাটা পড়ে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাসার একটি মুঠোফোন লুকিয়ে নিয়ে বের হয়েছিল শিশু পারভেজ মিয়া। সঙ্গে আরো তিন শিশু। তারা এগিয়ে আসা একটি ট্রেনের ভিডিও করছিল পাশের লাইনে বসে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি ট্রেনে কাটা পড়ে তারা মারা যায়। অন্য শিশুটি লাফ দিয়ে রেললাইন থেকে সরে যেতে পারায় প্রাণে বেঁচে যায়। এ ঘটনার পর ভাদুপুর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই মর্মন্তুদ মৃত্যুর কোনো ব্যাখ্যা নেই। শুধু এটুকু বলা যায়, ওই তিন শিশুর অভিভাবকরা যদি যথেষ্ট সতর্ক হতেন এবং শিশুরাও যদি এতটা বেখেয়াল বা অসচেতন না হতো তাহলে হয়তো তাদের এই অকাল ও শোকাবহ মৃত্যুর শিকার হতে হতো না। উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর একটা বড় কারণ মুঠোফোন। মুঠো ফোনে কথা বলতে বলতে কিংবা গান শুনতে শুনতে রেল লাইন ধরে হাঁটা বা পার হওয়ার সময় অনেকেই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। ঢাকা রেলওয়ের সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত একটি থানা এলাকায় চলতি বছরের ৯ মাসে ২৩০টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জন মারা গেছে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হওয়ার সময়। উল্লেখ করা যেতে পারে, রাজধানীতে বেশ কয়েকজন এভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। একটি ইংরেজি দৈনিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন শিশুর মৃত্যুর খবরের পাশাপাশি একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিটি নাখালপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রেল লাইনের ওপরে বেশকিছু লোক, যাদের একজনের কানে মুঠোফোন। যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের কোনো কিছুতে খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। এমতাবস্থায়, কোনো ট্রেন এলে দুর্ঘটনা ঘটা মোটেই অসম্ভব নয়। এ চিত্র কেবল নাখালপাড়া এলাকার নয়, রাজধানীর অন্যান্য এলাকাসহ প্রায় প্রতিটি শহর-বাজার এলাকাতেই প্রত্যক্ষ করা যায়।
মুঠোফোন সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মুঠোফোন রীতিমত বিপ্লব এনেছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই এখন মুঠোফোন। অথচ এই অনিবার্য উপকরণটিই অনেক মানুষের মৃত্যুর উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এজন্য মুঠোফোনকে মোটেই দায়ী করা যায় না। দায়ী হচ্ছে মানুষের সচেতনতার অভাব। সচেতনতার ঘাটতিতেই রেল লাইনে হরহামেশা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ট্রেনে কাটা পড়ে যারা মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স কম। কানে মুঠোফোন থাকায় অনেক সময় দ্রুতগতির ট্রেনের শব্দ শোনা যায় না। কেউ ডাক দিলেও কোনো কাজ হয় না। পথ চলতে কিংবা যানবাহন চালানোর সময় অনেককেই মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়, দেখা যায় ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে কিংবা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে। এটা যারা করে তাদের জন্য যেমন বিপজ্জনক, তেমনি অন্যের জন্যও। এ পর্যন্ত এ কারণে কতজন যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, হতাহত হয়েছে এবং অন্যের অনুরূপ পরিণতির কারণ হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। দুঃখজনক হলেও এসব খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তেমন বাড়ছে না। এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যু এড়াতে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে কী করা যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
আগে ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কালেভদ্রে কখনো ঘটত। এখন এটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেললাইনের দু’পাশে লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে গেছে। অনেক সময় কীভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তার হদিস পাওয়া যায় না। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে অথবা অন্যত্র হত্যা করে লাশ রেল লাইনের পাশে রেখে যাওয়া হয়েছে। এটাও কারো অজানা নেই, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের কিছু বৈধ, কিছু অবৈধ। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, সারাদেশে রেল নেটওয়ার্কে মোট ২৫৪১টি লেভেল ক্রসিং আছে যার মধ্যে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৭৮০টি। বাকি ১৭৬১টি অনুমোদনহীন। আবার ৭৮০টি অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রক্ষী বা গেটকিপার আছে, বাকিগুলোতে নেই। অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংয়ে তো রক্ষী থাকার কথাই নয়। এমতক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সংখ্যা-সীমা নিরূপণ করা কঠিন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন বছরে ৮৩৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। এই যাবতীয় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং সুরক্ষিত করা উচিত, অনুমোদনবিহীন লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া উচিত। এই সঙ্গে জনসতর্কতা বৃদ্ধির জন্য রেল লাইনজুড়ে সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন ফলক স্থাপন করা উচিত। বলাই বাহুল্য, দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকেও সতর্ক হতে হবে। সতর্কতাই এ ক্ষেত্রে প্রধান রক্ষাকবচ।

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন