খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে বেড়েছে আগাম আনারসের আবাদ। পাহাড়ের ১১শ’ হেক্টর জমিতে আগাম আবাদে হয়েছে বাম্পার ফলন। বাড়তি দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। পার্বত্য জেলায় আনারসের রাজধানী মাটিরাঙ্গার। এখানে পাহাড়ি বাঙালি মিলে কয়েকশ পরিবার আনারসের চাষ করে। ক্রেতা ও পাইকার সবার কাছেই রয়েছে পাহাড়ের এই আনারসের কদর।
আগাম আনারসে ভরপুর হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির বাজারগুলো। শহরের বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রামেও সরবরাহ হচ্ছে মাটিরাঙ্গার আনারস। স্থানীয় হাট বাজার থেকে এনে অনেকে ফেরি করে শহরের বিভিন্ন আনাচে কানাচে আনারস বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
চাষি ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে আনারসের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। মাটিরাঙ্গায় মৌসুমের আগেই হাটবাজারে এসেছে প্রচুর আনারস। বাজারে বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। তবে কৃষকদের কাছে পাইকাররা কিনছেন মাত্র ৩০-৪০ টাকায়। মাটিরাঙ্গার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আনারস জেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে খাগড়াছড়ির আনারস যাচ্ছে ঢাকা, শরীতপুর ও চট্টগ্রামসহ বাইরের জেলাতেও। চাষিরা মনে করছেন, করোনার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতবারের আগাম আনারস চাষিরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবার ভালো ফলন হওয়ায় তা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তারা আশা করেন।
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে বাহির থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এতে করে লাভবান হচ্ছে কৃষক এবং ব্যবসায়ী দুজনেই। জানা যায়, পাহাড়ি জেলাগুলোতে আনারসের মৌসুম ছাড়াই বিগত কয়েক বছর ধরে আগাম ফলন আসায় আনারস চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। এতে মৌসুমে উৎপাদিত আনারসের থেকে আগাম আনারসে বাড়তি লাভ করতে পারেন চাষিরা। লক্ষিছড়ির মধ্য আদাম গ্রামের চাষি সুলক্ষণ চাকমা জানান, আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি ফল পেয়েছে। এই আনারসগুলো রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, আমি মহালছড়িতে এসে মৌসুমি ফল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। বাগান থেকে কিনে নেওয়ার কারণে একটু কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিছ আনারস ৪-৫ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১৪-২০ টাকায়। এতে করে খরচ এবং গাড়িভাড়া দিয়ে স্বল্প লাভ হলেও সমতলে এর চাহিদা রয়েছে বেশ।
এদিকে-নানিয়ারচর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আনারস নিয়ে আসছেন মহালছড়ি ভাসমান পাইকারি বাজারে। সেখান থেকে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পাইকাররা পাইকারি দরে আনারস কিনছেন।মহালছড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে খুচরা বাজারে প্রতি জোড়া মাঝারি আকারের আনারস বিক্রয় হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। বড় আকারের আনারস বিক্রয় হচ্ছে ৬০ টাকা জোড়া।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মুর্তুজ আলী বলেন, ‘২০২০ সালের গত মৌসুমে এজেলায় আগাম আনারসের চাষ হয়েছিল ২১৩০ হেক্টর জমিতে। এবার আনুমানিক ১১০০ হেক্টর জমিতে আগাম অমৌসুমি আনারসের চাষ করা হয়েছে। আগাম আনারস চাষে ফনল বৃদ্ধির জন্য এক ধরনের ভিটামিন ব্যবহার করা হয়। তবে এই ভিটামিন মানবদেহে তেমন ক্ষতিকারক নয়। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন