শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : এক ভার্সনের ক্রিকেট থেকে অন্য ফরমেটের ক্রিকেটে অভিষেকে যে দিতে হয় পরীক্ষার পর পরীক্ষাÑ সে প্রতীক্ষার আদর্শ বিজ্ঞাপন হতে পারেন সাব্বির রহমান রুম্মান। গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্বর্ণজয়ে অবদান রেখে বন্ধু নাসিরের যেখানে ওয়ানডে অভিষেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছর, পরের সিরিজেই টি-২০ এবং টেস্ট অভিষেকÑ সেখানে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যে নাসিরের চেয়েও বেশি আলো ছড়িয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে সাব্বির রহমান রুম্মানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সাড়ে তিন বছর! দলে নাসিরের জায়গাটা টি-২০, ওয়ানডেতে দিয়েছেন নড়বড়ে করে, টেস্টেও বন্ধুকে হটিয়ে পেয়েছেন জায়গা। ব্যাটিংয়ে মেজাজটা তার আক্রমণাত্মক বলেই ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারীতে অভিষেক তার টি-২০ দিয়ে, ৯ মাস পর ওয়ানডে অভিষেক, ওয়ানডে অভিষেকের ২৩ মাস পর টেস্ট অভিষেকের সামনে দাঁড়িয়ে সাব্বির রহমান রুম্মান! দল ঘোষণার সময়ে কোচ হাতুরুসিংহে নিজেই রুম্মানকে তার অগোচরে দিয়েছেন ইয়েস কার্ড। কাকতালীয় হলেও সত্য, টি-২০ এবং ওয়ানডে ফরমেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয়েছে রুম্মানের যে ভেন্যুতে, চট্টগ্রামের সেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই টেস্ট অভিষেকের হাতছানি দিচ্ছে রাজশাহীর এই ছেলেটির।
টি-২০ থেকে ওয়ানডে ম্যাচে প্রমোশন, এই দুই ফরমেটের ক্রিকেটে পারফর্ম করে এবার টেস্টে প্রমোশন! যে ছেলেটির মেজাজ মার মার কাট কাট ব্যাটিংÑ সেই ছেলেটিকেই কি না মনোসংযোগের কঠিন পরীক্ষা, বল ছাড়ার সংযম দেখতে টেস্টে অবতীর্ণ করা হচ্ছে! ব্যাপারটি বড়ই অদ্ভুত, তাই না। তাও আবার টি-২০, ওয়ানডে মিলিয়ে ৫৫টি ম্যাচ পার করার পর টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন সাব্বির! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২ বছর ৮ মাস কাটানোয় টেস্টের মেজাজটা সহজেই রপ্ত করতে পারবেন বলে বিশ্বাস বদ্ধমূল রুম্মানেরÑ ‘৫০-৬০টি ম্যাচ খেলার পর টেস্ট ম্যাচে ঢোকাটা অনেক বড় একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য অবশ্যই এটা ভালো একটা ব্যাকআপ দিবে। প্রথমে সবাই ভাবতো আমি টে-টোয়েন্টি খেলোয়াড়, ওয়ানডে বা টেস্টে আমি খেলতে পারবো না। কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি যে, ওয়ানডেও আমি খেলতে পারি। টেস্ট দলে আমি সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করবো এই তিন ফরমেটের ক্রিকেটে যেন একইভাবে খেলতে পারি।’
টেস্টে বল ছাড়ার পরীক্ষাকে স্বাগত জানিয়েছেন নিজেই। সেই রেসিপিটা জেনেছেন ইতোমধ্যেÑ ‘ছয় মারি বা চার মারি, রান তো রানই। সবাই স্কোরটাই দেখবে। স্ট্রেন্থ প্রমাণে চেষ্টা করবো। টেস্টে অনেক বল ডট হলেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে বল ডট হলেই চাপ চলে আসে। তাই টেস্টে চাপের কিছু নেই। সময় নিয়ে খেলাটাই সবচেয়ে ভালো। ওয়ানডের আগে মনস্থির করতাম এক ধরনের, আর টি-টোয়েন্টির আগে বল টু বল খেলাকে দিতাম গুরুত্ব। বল কিভাবে জাজমেন্ট করতে হয়, টেস্টে এই মাইন্ড সেট আপই থাকবে আমার। এভাবেই একা একা অনুশীলন করেছি।’
টেস্ট দলে নাম দেখে সাব্বিরের পরিবার ভীষণ খুশি। টি-২০তে লোয়ার অর্ডার থেকে প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন, ওয়ানডেও ৮ নম্বর থেকে তিন নম্বরে প্রমোশন পেয়ে কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এই দুই ফরমেটের ক্রিকেটে। টেস্ট স্বপ্ন পূরণের সামনে দাঁড়িয়ে রুম্মান মেলে ধরতে চান তিন ডিপার্টমেন্ট, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে অবদান রেখে কোচের অবশিষ্ট আস্থারও প্রতিদান দিতে চানÑ ‘ছোট বেলাই থেকে স্বপ্ন ছিলো, আমি টেস্ট খেলবো। যেহেতু ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি আমি বোলিংও করতে পারি, ফিল্ডিংও পারি, তাই আমি চেষ্টা করবো তিন বিভাগেই যেন ভালো কিছু দিতে পারি। আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন কোচ, ভালো কিছু করে কোচের সে আস্থার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করবো।’
লেগ স্পিনারের পরিচয় আছে। তবে প্রথম ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে যে তিনটি উইকেট শিকার করেছেন, তার ২টি লেগ স্পিনে, অন্যটি অফ স্পিনে! ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপে অন্তত: ৫ জন বাঁ হাতি হওয়ায় নিজের অফ স্পিন উদ্ভাবনটা অনুশীলন ম্যাচে কাজে লেগেছে, টেস্টেও ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ধাঁধায় ফেলতে লেগ স্পিনের পাশে অফ স্পিনও করার কথা ভাবছেনÑ ‘সব সময়ই বোলিংয়ে আমি আগ্রহী। দলে নিয়মিত বোলার হতে চেষ্টা করছি। লেগ স্পিনে বেশি কিছু করতে পারছিলাম না। কারণ, গুগলির মতো অস্ত্র নেই আমার। তাই বোলিংয়ে বাড়তি কিছু করতে অফ স্পিন শিখেছি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য লেগ স্পিনই করব। বাঁহাতি এলে অফ স্পিন। যাতে ব্যাটসম্যানকে দ্বিধায় ফেলা যায়।’
চট্টগ্রাম টেস্টে ১৪ সদস্যের ঘোষিত দলে ৪ নুতন। সবাই নাকি রোমাঞ্চিত, এমনটাই জানিয়েছেন সাব্বিরÑ ‘সবাই অনেক এক্সাইটেড। রাব্বি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমরা চারজন চারজনের দিকে তাকাচ্ছি।’ টেস্টে ২০ উইকেট নেয়ার মতো বোলিং কম্বিনেশন খুঁজে পাচ্ছেন না বলে হেড কোচ হাতুরুসিংহে বিলাপ করলেও ম্যাচে নামার আগে পিছিয়ে থাকার পক্ষপাতী নন রুম্মান। দল হিসেবে ভাল খেলাটাই বড় কথা, এটাই তার দর্শনÑ ‘কোচের এই কথায় নেতিবাচক কিছু মনে হচ্ছে না। কারণ, ২০ উইকেট নেয়ার চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন