শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

তিস্তার পানি বণ্টনে শীতলতা ভাঙতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিক্স ও বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উপস্থিতি এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য কোন নতুন সুসংবাদ বয়ে আনেনি। দুই নেতার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রসচিব উন্নয়নের পথে ঢাকা-দিল্লী একসঙ্গে চলার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেছেন। দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং ভারতের সাথে সকল সমস্যার সমাধানের বিষয়ে গতানুগতিক প্রত্যাশার কথা বলা হলেও তিস্তার পানি বণ্টনের মত ইস্যুকে কার্যত পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৈঠকে কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সাথে ভারতের বিরোধ ও বৈরিতার প্রেক্ষাপটে আগামী সার্ক সম্মেলন স্থগিত এবং সার্কের ভবিষ্যত প্রশ্নে ভারত ও বাংলাদেশ ঐকমত্য পোষণ করলেও তিস্তার পানি বণ্টন এবং বাংলাদেশে সম্ভাব্য গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রসঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে। গত বছর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ই বাংলাদেশের জনগণ তিস্তার পানি বণ্টনে দিল্লীর পক্ষ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক ঘোষণা প্রত্যাশা করেছিল। রাজনৈতিক কারণে সে সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি বলে বলা হলেও শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর গোয়ায় বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকটি ছিল এক বছরের বেশী সময়ের ব্যবধানে দুই নেতার সরাসরি বৈঠক। এই বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কোন ইতিবাচক তথ্য না থাকা জাতির জন্য হতাশাজনক।
আগামী সার্ক সম্মেলনে যোগদান না করার পক্ষে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য থাকলেও ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুর সাথে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সার্ক বিমসটেকের বিকল্প হতে পারে না। এর মানে কি এই যে, সার্ক ও বিমসটেক আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে দুই সংস্থাই টিকে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী? সার্কের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভারতীয়রা যতই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করুন, সার্কের প্রস্তাবক দেশ হিসেবে সার্ক টিকিয়ে রাখার পক্ষে বর্তমান সরকারের কাছে দেশের মানুষ ইতিবাচক ভূমিকাই প্রত্যাশা করেন। একইভাবে তিস্তার পানিচুক্তি এবং গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বিষয়েও অহেতুক কালক্ষেপণ বা দোদুল্যমানতা প্রত্যাশিত নয়। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে চীনা বিনিয়োগে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে চীনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির একটি হাইপোথেটিক্যাল অভিযোগ শোনা যায়। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে হবে। অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার বিরোধের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পিছিয়ে পড়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায়না।
বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের দু’দিনের ঢাকা সফর শেষে শি জিনপিংসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতে ব্রিক্স সম্মেলন এবং বিম্সটেক সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সময়টিকে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক বিষয়ে অচলাবস্থা নিরসনের সুযোগ মনে হয় যথাযথভাবে ভাবে কাজে লাগানো যায়নি। বিশেষত: তিস্তার পানি বণ্টনে নরেন্দ্র মোদির আগের আশ্বাস এবং নতুন কোন অগ্রগতির সংবাদ না থাকা দুঃখজনক। বিমসটেক সম্মেলনের আউটরিচ সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত হাসিনা-মোদি বৈঠক সম্পর্কে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনামে বলা হয়েছে, তিস্তার পানি সংক্রান্ত বিষয়টিকে ভারত আগের মতই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। গত আট বছরে ভারতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদল ঘটলেও আগের কংগ্রেস সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতা মোদির বিজেপি সরকারের সময়ও বাংলাদেশ ভারতের সাথে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের জন্য বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিচুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং নরেন্দ মোদির প্রতিশ্রুতির পরও তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে ভারত। তবে বাংলাদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত হিসেবে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে ভারতকে অনেকটা একপাক্ষিক করিডর দিতেও বাংলাদেশ কোন দরকষাকষি বা কালক্ষেপণ করেনি। বিনিময়ে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবীর প্রতি ভারতের অনীহা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের ট্রানজিটে বাংলাদেশের বন্দর, সড়ক-অবকাঠামোর উপর বাড়তি চাপ তৈরী হলেও ট্রানজিটের শুল্ক নির্ধারণেও বাংলাদেশের কোন স্বার্থই রক্ষিত হচ্ছেনা বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্পসহ সমগ্র উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিতে শুরু করেছে। বছর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টনসহ অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে ভারতের ইতিবাচক কার্যকরী ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন