রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের সাফল্য ও সতর্কতা

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হতদরিদ্রের হার কমাতে বাংলাদেশ যে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে তা পুরো বিশ্বকে আশাবাদী করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। একই সঙ্গে তিনি আশাবাদ জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বও একই কাজ করবে। হতদরিদ্র ও অতিদরিদ্রের হার কমাতে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে হবে। সেই সঙ্গে আরো বেশি ও উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ নজর দিতে হবে জ্বালানী ও যোগাযোগ অবকাঠামোতে। মানসম্মত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশাসনে আরো বেশি উন্নতি করতে হবে। শক্তিশালী করতে হবে দুর্নীতি বিরোধী কর্মকা-। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টাকে আরো বেগবান করবে। প্যানেল আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিনিয়োগ পরিকল্পনা-খরচ সুযোগ তৈরি করাই দারিদ্র্য বিমোচনের মূলমন্ত্র। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ৮২ শতাংশই আসে বেসরকারি খাত থেকে। তাই বেসরকারি খাতের অবদানই বেশি। সরকার বেসরকারি খাতকে নানা ধরনের নীতি সহায়তা দিয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক। কাজের সুযোগ এখানে কড়া নাড়ছে। আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পলরোমার দ্রুত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্য বিমোচন যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, গ্রাম থেকে আসা গরীব মানুষের জন্য শহর এলাকায় কীভাবে কর্মসংস্থান ও মানসম্মত জীবনধারণের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। শহরে কাজের অনেক সুযোগ আছে, কিন্তু গ্রামে কম। উন্নয়ন টেকসই করতে হলে শহর ও গ্রামে এ সুযোগ তৈরির ব্যবধান কমাতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের প্রশংসা ও সতর্কবাণী অবশ্যই গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২ কোটি ৫ লাখ লোককে দারিদ্র্য সীমার উপরে তুলে এনেছে। তবে এখনো বাংলাদেশের আরো অনেক কাজ করার আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, সুশাসন শক্তিশালী করা এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে কম। যদি সুশাসন বাড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে তা কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে। বাস্তবতও বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কোন মহলেই কোন দ্বিধা-সন্দেহ নেই। আবার সেই সাথে এ প্রসঙ্গকে যদিও কিন্তু মুক্ত করা যায়নি। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের পরও ঋণ-সাহায্যের আশ্বাস সব মিলিয়ে অনেক বড় প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গেও বিশ্লেষকরা বলছেন, কথা যাইহোক বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রতিবছরই অর্থনৈতিক বছরের শেষে দেখা যায় সক্ষমতার অভাবে অনেক বিদেশি সাহায্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। টাকা ফেরত যাচ্ছে। আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক আস্থার প্রসঙ্গ। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যখন সুশাসন ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে কথা বলছেন, ঠিক তখন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন, ইইউ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ইইউ সদর দফতরে বাংলাদেশ ইইউ যৌথ কমিশনে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কেন এ প্রসঙ্গ উঠছে তার বিশদ বিবরণের কোন প্রয়োজন নেই। বোধকরি একথা সকলেরই জানা যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনা সর্বত্র রয়েছে এসব তারই প্রতিধ্বনি। আস্থা সুশাসন মানবাধিকার সবকিছুই নির্ভর করছে দেশে কতটা গণতন্ত্র রয়েছে, মানুষ কতটা স্বস্তিতে রয়েছে তার উপর। বিদেশি বিনিয়োগ যে এখন পর্যন্ত কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না তার মূলেও রয়েছে এক ধরনের আস্থার সংকট। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মূলত স্থিতিশীলতার উপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। সে বিবেচনায় অবশ্যই প্রকৃত ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে গেলে কার্যকর ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদ্যমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের কথায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বব্যাংকের যে মনকষাকষি ছিল তা দূর হয়েছে। আমরা একে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে অংশীদার হবার যে আকাক্সক্ষা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন সে জন্য তাকেও আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
উন্নয়ন কোন বিচ্ছিন্ন ধারণা নয়। রাজনীতির সাথে এটি সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বসভায় কেউ কারো থেকে আলাদা নয়। একত্রে থাকতে হলে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপারটি অপরিহার্য। এজন্যই পরিবেশ সৃষ্টির প্রসঙ্গ সকল মহল থেকেই উঠে আসছে। কেবল বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলে নয়, সার্বিকভাবেই বলা যায় ঋণ-সাহায্য কাজে লাগাতে হলে যে ধরনের সক্ষমতা অর্জন প্রয়োজন তা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি হচ্ছে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও তার বক্তৃতায় উন্নয়নকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দেখেছেন। এটি যাতে অব্যাহত থাকে বা থাকতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টির দায়-দায়িত্ব প্রধানত সরকারি মহলের উপরই বর্তায়। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে গা ভাসিয়ে না দিয়ে বরং তার কথার অন্তর্নিহিত সুর অনুধাবনে সংশ্লিষ্টরা যতœবান হবেনÑ এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন