বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন সঙ্কটে দুইটি কারখানা বন্ধ

দৈনিক উৎপাদন কমেছে ৭শ টন

লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

সয়াল্যান্ড খ্যাত লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন সংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদিত সয়াবিনের অপ্রতুলতা এবং আমদানি বন্ধ থাকায় সয়াবিন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন প্রসেসিং কারখানায় দৈনিক উৎপাদন কমে গেছে প্রায় ৭শ টন। ইতোমধ্যেই দুইটি প্রসেসিং কারখানা দুই মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্প নগরীর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় সাতটি সয়াবিন কারখানার মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি সয়াবিন প্রসেসিং কারখানা চালু রয়েছে। সেগুলোতে দৈনিক প্রায় এক হাজার টন সয়াবিন প্রসেসিং করা হতো। যার মধ্যে বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত দুইটি কারখানায় ৪০০ টন, ভবানীগঞ্জের চরমনসাতে অবস্থিত একটি কারখানায় ১০০ টন এবং চর চামিতায় অবস্থিত দুইটি কারখানায় ৫০০ টনসহ মোট এক হাজার টন সয়াবিন সয়াবিন প্রসেসিং করা হতো। বর্তমানে সবগুলো কারখানায় এক হাজার টনের পরিবর্তে বর্তমানে ৩শ টন প্রসেসিং করা হয়। সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট এবং তেরবেঁকি এলাকায় অবস্থিত দুইটি সয়াবিন প্রসেসিং কারখানা বন্ধ রয়েছে।

কারখানার মালিকদের সূত্রে জানা যায়, সয়াবিন মৌসুমে কারখানা গুলো স্থানীয় বাজার থেকে প্রায় ৪০ হাজার টন সয়াবিন ক্রয় করে সংরক্ষণ করে। যা দিয়ে প্রায় তিন থেকে চার মাস চলে। বাকি সময় আমদানিকৃত সয়াবিন দিয়ে তাদের কারখানা চালানো হয়। কিন্তু এ বছর দীর্ঘদিন সয়াবিন আমদানি বন্ধ রয়েছে। সয়াবিন ট্রেডিং ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল জানান, কাঁচা সয়াবিন, ফুল ফ্যাট সয়াবিনসহ সয়াবিনের কাঁচামালের পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ঢাকার মতিঝিলের ট্রেডিং এজেন্সিগুলোর হাতে। ট্রেডিং এজেন্সিগুলো সয়াবিন মৌসুমে স্থানীয় আড়তদারদের মাধ্যমে কাঁচা সয়াবিন কিনে সংরক্ষণ করে। কাঁচা সে সয়াবিন পাঠায় প্রসেসিং মিলসে। প্রসেসিং মিলসগুলো প্রতি টন ১৩শ-১৫শ টাকার মধ্যে সিদ্ধ করে শুকিয়ে ফুল ফ্যাট সয়াবিন তৈরি করে আবার এজেন্সিতে পাঠায়। ট্রেডিং এজেন্সি থেকে ফিড কোম্পানী গুলো ফুল ফ্যাট সয়াবিন কিনে পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড, ক্যাটেল ফিড এবং সয়াবিনজাত পণ্য তৈরি করে। কোনো কোনো ট্রেডিং এজেন্সি বিদেশেও ফুল ফ্যাট সয়াবিন রপ্তানি করে।
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত কোয়ালিটি সয়াবিন প্রসেসিং মিলসের মালিক আবদুর রহিম জানান, তার কারখানায় দৈনিক ১১০ টন ফুল ফ্যাট সয়াবিন উৎপাদন হতো। গত দুই মাস উৎপাদন প্রায় বন্ধ। স্থানীয় উৎপাদিত সয়াবিন প্রায় শেষ। এখন যে সকল ব্যবসায়ীর নিকট সয়াবিন আছে তাঁরা আরও লাভের আশায় স্থানীয় সয়াবিন বাজারে ছাড়ছে না। অন্যদিকে গত এপ্রিল থেকে সয়াবিন আমদানি বন্ধ থাকায় সয়াবিনের অভাবে কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর চামিতা এলাকায় অবস্থিত নাসরিন এগ্রো কমপ্লেক্সে বৃহত্তম দুটি সয়াবিন প্রসেসিং কারখানা রয়েছে। এ দুটি কারখানায় দৈনিক পাঁচ শতাধিক টন প্রক্রিয়াজাতকৃত বা ফুল ফ্যাট সয়াবিন উৎপাদিত হয়।
কারখানার সহকারি মহাব্যবস্থাপক হাসনাইন আবদুল্লাহ নাসির জানান, এ বছর প্রায় ৩০ হাজার টন স্থানীয় উৎপাদিত সয়াবিন ক্রয় করে নাসরিন এগ্রো কমপ্লেক্স। স্থানীয় সয়াবিনে তাদের দুই মাস কারখানা চলে। এরপর তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন আমদানি করে। বর্তমানে আমদানি করা সয়াবিনে তাদের কারখানা চলছে। তবে উৎপাদন ৫০০ টনের স্থলে এখন দৈনিক ২০০ টন উৎপাদন হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, গত মৌসুমে সারাদেশে ১ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদিত হয়, এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলায় উৎপাদিত হয় ৯০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন। গত মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে সয়াবিনের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ছিল প্রতি টন ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে স্থানীয় সয়াবিনের দাম প্রতি টন ৫৫ হাজার টাকা এবং আমদানিকৃত সয়াবিনের দাম ৫৯ হাজার টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন