শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তালেবান ইস্যুতে বাইডেনকে কৌশলী হতে আহ্বান মিত্রদের

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবে কাতার

ওয়াশিংটন পোস্ট | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ভিত্তিক বিষয়গুলি পরিচালনা এবং নির্জন দূতাবাসটিকে রক্ষানাবেক্ষণ করতে ‘সুরক্ষা শক্তি’ হিসাবে অভিহিত করে কাতারকে দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এ বিষয়ে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে একটি নতুন মার্কিন-কাতারি চুক্তি ঘোষণা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি। এ চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে আফগানিস্তান থেকে বাকি মার্কিন নাগরিক ও মিত্রদের প্রস্থানে সহায়তা প্রদান করবে কাতার।

বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে ভীত মার্কিনীদের সরিয়ে আনার ইস্যুতে বারবার দ্বিপক্ষীয় তোপের মুখে পড়ছে। কারণ মার্কিন নীতি নির্ধাকরা, প্রাক্তন যোদ্ধারা এবং বেসরকারী সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা এবং দেশের অভ্যন্তরে এখনও ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের প্রতি আরো পদক্ষপে নিতে জন্য চাপ দিচ্ছে। এরমধ্যে একটি দ্বিতীয় মার্কিন-কাতার চুক্তির মাধ্যমে কাতারের ভূমিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিণত করা হ’ল, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হল, গত দুই দশক ধরে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর সাথে কাজ করা আফগানদের বিশেষ অভিবাসী ভিসার জন্য যোগ্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করা।

চুক্তিটির সাথে পরিচিত একজন কর্মকর্তা কাতারের ভূমিকাটিকে ইরানে মার্কিন স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী সুইজারল্যান্ডের মতো বলে অভিহিত করেছেন। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘কাতার আফগানিস্তানে নির্দিষ্ট কনস্যুলার পরিষেবা প্রদান করতে নিজের দূতাবাসের মধ্যে একটি মার্কিন স্বার্থ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করবে এবং আফগানিস্তানে মার্কিন কূটনৈতিক সুবিধাগুলোর অবস্থা ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে।’

আগস্টে তালেবান কাবুল দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তাদের আফগানিস্তানের দূতাবাস কাতারের রাজধানী দোহাতে সরিয়ে নেয়। এবং যদিও কাতার বা অন্য কোন দেশ তালেবার শাসিত আফগানিস্তানের সাথে এখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি, তবে, রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তানসহ কাবুলে যে কয়েকটি দূতাবাসের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, এটি তার মধ্যে একটি।

আগস্টে ১ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি লোককে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে সহায়তাকারী কাতার সেই দেশগুলোর অন্যতম, যারা তালেবানের সাথে ধাপে ধাপে দর কষাকষির জন্যও চাপ দিচ্ছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করা এবং এটিকে উপেক্ষা করা একটি বড় ভুল হবে, কারণ বিচ্ছিন্নতা কখনই উত্তর ছিল না। আমরা বিশ্বাস করি যে তালেবানরা এখন ক্ষমতায় থাকায় তাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ইতোমধ্যে, তালেবানদের মোকাবিলা করার জন্য এবং আসন্ন মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য একটি সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদী কৌশল বিকাশে মার্কিন প্রশাসনের ব্যর্থতায় এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন তালেবান সরকারকে হিমায়িত তহবিল এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করতে যুক্তরাষ্ট্র অনুমতি না দেয়ায় ইউরোপ এবং এই অঞ্চলের ঘনিষ্ঠ মার্কিন অংশীদাররা ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন। তালেবান ইস্যুতে বাইডেনকে কৌশলী হতে আহ্বান করেছেন তারা।

তবে, মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তারা বলেছেন যে, মেয়েদের জন্য পূর্ণ শিক্ষার সুযোগ, ভ্রমণের স্বাধীনতা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারসহ আন্তর্জাতিক দাবিগুলোর প্রথম বাস্তব অগ্রগতি না হলে, কেউ তালেবানকে এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে ইচ্ছুক নয়। এছাড়া, তালেবানের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তালেবানের অভ্যন্তরে কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী এবং বাস্তববাদীদের মধ্যে বিভেদ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমাবদ্ধতা দূর করতে আলোচনা এবং আস্থা স্থাপনের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে।

এদিকে, কেউ কেউ উদ্বিগ্ন যে, চীন ইতোমধ্যেই আফগানিস্তনের শূন্যতাগুলো পূরণ করতে শুরু করেছে। কারণ তারা এই অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে চায়, আফগান খনিজ সম্পদ আহোরণ করতে চায় এবং একটি প্রধান আরব সমুদ্র বন্দরের আরো সরাসরি একটি রুট হিসেবে দেশটিকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় আনতে চায়, যা তারা ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানে নির্মাণ করেছে। এ প্রেক্ষিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি গত মাসে দোহাতে তালেবান অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং আফগানিস্তানের প্রতি চীনের রাষ্ট্রদূত ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছেন।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো আফগানিস্তানে আসন্ন গণ-অনাহার সম্পর্কে সতর্ক করছে এবং দেশটিতে সাহায্য সরবরাহ করতে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য স্টপগ্যাপ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। তবে, এটি যথেষ্ট কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য কোন সামগ্রিক পরিকল্পনা নেই। ইউরেশিয়া অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যে মুহুর্তে তারা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে, আমরা সবাই এর নিন্দা করব। কিন্তু এটি এড়াতে, তারা যা দাবি করে তা পেতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অংশীদারদের অবশ্যই পর্যাপ্ত ত্রাণের প্রস্তাব দিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা শুরু করতে হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন