শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পাহাড়ি অঞ্চলে কফি ও কাজু বাদাম চাষের অপার সম্ভাবনা

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে এস.কে সাত্তার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৩৭ পিএম

সীমান্তবর্তী শেরপুরের ঝিনাইগাতী,শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়িসহ, গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চলে কাজুবাদামও কফি চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কফি পানীয় হিসেবে বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও কফি জনপ্রিয় পানীয়। শহর, গ্রামাঞ্চল সর্বত্র চাহিদা রয়েছে। যে কফি পাওয়া যায় তার বেশীর ভাগ আমদানিকৃত। আশার কথা, পার্বত্যাঞ্চলে চাষ হচ্ছে কফি। যা শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাক্তি, সরকারী-বেসরকারী উদ্যাগে বানিজ্যিকভাবে চাষ করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কফির আবাদে ইতোমধ্যেই বান্দরবানের চাষিরা সফলতা পেয়েছেন। পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ কফিও কাজুবাদম চাষের জন্য উপযোগী। ইতোপূর্বে গারো পাহাড়ে ছিল নানা প্রজাতির পাহাড়ি ফলদ গাছ। সুতরাং এখানে কফি ও কাজু বাদাম চাষযোগ্য হবে। কেননা বান্দরবান পাহাড় ও গারো পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া একই ধরণের। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে কফি চাষ হচ্ছে, কৃষকরা সফলতাও পেয়েছেন। একই ধরণের মাটি ও আবহাওয়া গরো পাহাড়ে কফি এবং কাজুবাদাম চাষ সম্ভব বলে সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল, শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, সরোয়ার্দী দুদু মন্ডলসহ প্রবিণ লোকজন জানান। তারা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে কফির চাষ হলে গারো পাহাড়ে হবে না কেন? মাটি ও আবহাওয়াতো একই। সুতরাং পাহাড়ে কফি-কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবণা রয়েছে। চিম্বুক পাহাড়ের কফি চাষ সরেজমিন ঘুরে এসে একটি বেসরকারী কোম্পানীর চট্রগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা শেরপুর শহরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান সুজন বলেন, সেখানকার কফি চাষিদের সাথে আলাপ করে জেনেছি, চারা রোপনের ২ বছর থেকে ফলন দেয়। ৩য় বছর দেয়া শুরু হয় ফল। গাছ ৭০/৮০ বছর বাঁচে। জানুয়ারীরতে ফুল আসে, সপ্তাহান্তেই ফলে পরিণত হয়। নভেম্বরে ফল পাকে। ফল সংগ্রহ করে প্রকৃয়াজাত করতে হয়। তিনি বলেন, আম, জাম, জাম্বুরাসহ ফলদ বাগানে সাথী ফল হিসেবে কফি চাষ হচ্ছে। চারা বর্ষায় রোপণ করতে হয়। ছায়া ও মাটির আদ্রতা লাগে। বেশী ছায়া হলে ফলন কম হয়। রোদ প্রয়োজন। সেখানে রোবস্ট ও অ্যারিয়েন নামে ২ ধরণের কফি চাষ হচ্ছে। কফির খোসাসহ প্রতি কেজি দুই-আড়াই শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাছ থেকে বছরে ৫ থেকে ১৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। ফলন শুরু থেকে টানা ৪০-৫০ বছর কফি পাওয়া যায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, চাকুরি শেষে বাড়ী এসে কফির চাষ করবেন। সে জন্য তিনি সব বিষয়ে জেনেছেন। তিনি জানান, দেশে চাহিদার তুলনায় কফি উৎপাদন হয় কম। ফলে ইথিওপিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অথচ পাহাড়ে চাষের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, কৃষি বিভাগ কফি ও কাজুবাদাম প্রদর্শনী প্লট করে ইতোমধ্যেই প্রবল্প হাতে নিয়েছে, কৃষকদের উদ্যোদ্ধ করছে। চিম্বুক পাহাড়ে কফির চাষ হলে গারো পাহাড়ে হবে না কেন? মাটি ও আবহাওয়াতো একই। সুতরাং পাহাড়ে কফি ও কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবণা রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু, মাটির ধরণ অনুযায়ী পাহাড়ি অঞ্চল কফি ও কাজুবাদাম চাষে উপযোগী। পাহাড়ে ব্যাপকভাবে কফি ও কাজুবাদাম চাষ করে প্রয়োজনে এখানে কফি ফ্যাক্টরী করা সম্ভব। এ জন্য শুধু সরকারী/ বেসরকারী উদ্যোগ, সাহায্য- সহযোগীতা ও পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।

নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক-আল-মাসুদ বলেন, “সারা দেশের যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম এবং কফির চাষের সম্ভাবনা রয়েছে, তা চাষের আওতায় আনতে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।” গারো পাহাড়কে এ প্রকল্পের আওতায় এনে কাজুবাদাম ও কফির চাষ করা যেতে পারে এবং ব্যাপক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত কফি ও কাজুবাদাম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ছাড়াও অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অপার সম্ভাবণা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন