বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

সকলে মিলে কাজ করার অঙ্গীকার ডা. ফওজিয়ার

‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০৫ পিএম

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সংগঠন ১১ বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সময় অনুযায়ী কোর্স এর বিষয়বস্তু পরিবর্তন করতে হয়। তিনি আগামী বছরের কোর্সকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য সকলে মিলে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে কিছু নারীর অগ্রসরতা দেখা যাচ্ছে যার ফলে সামগ্রিকভাবে নারীর জীবনে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ চিহ্নিত করা গেছে। নারী আন্দোলন মনে করে নারীর প্রতি এই বৈষম্য কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে এখন তাত্ত্বিকভাবে কাজ করার জন্য একাডেমিশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানান। সহিংসতা কিভাবে নারীর মানবাধিকারকে লঙ্ঘিত করছে তা এখনো দেখা হয় না। নারীর শ্রমের মূল্যায়ন এখনো করা হয়না এবং গণতন্ত্রায়ন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় বাধা আছে, এসব বিষয়ে আরো কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে পরিচালিত ‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সার্টিফিকেট কোর্সের কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম। আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জননী সাহসিকা এবং মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম পুুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মহিলা পরিষদ ৫১ বছর ধরে নারী সমাজকে সচেতন করতে, নারীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বহুমাত্রিক কাজ করছে। একই সাথে জেন্ডার সংবেদন শীল মানবসম্পদ তৈরি করতে কাজ করছে। নারী আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নারী বান্ধব নানা আইন গৃহীত হলেও নারীরঅংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি দিতে এখনো বৈষম্য দেখা যায়। যার অন্যতম কারণ নারীর প্রতি অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গি, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এখনো চলমান । জেন্ডার সংবেদন শীল মানবসম্পদ তৈরি করতে কোর্সটির মাধ্যমে শিক্ষা, রাজনীতি, আইন সহ সকলদিকের সাথে জেন্ডার ইস্যূকে যুক্ত করে পাঠদান করা হয়। কোর্সটির উদ্দেশ্য হলো জেন্ডার সমতাপূর্ণ সমাজ গড়তে অবদান রাখা নারীবাদের তত্ত্ব ও মাঠপর্যায়ের লব্ধ জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করতে একাডেমিশিয়ানদের সাথে সংগঠকদের একটা গভীর যোগসূত্র তৈরি করেছে। যা কাজের ও তত্বের যোগসূত্র তৈরির মাধ্যমে নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও সমতাপূর্ণ সমাজ তৈরিতে সকলকে একটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করেছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ২০১১ সাল থেকে কোর্সটি শুরু হয়, তবে কোভিডের কারণে ২বছর ধরে কোর্সটি অনলাইনে পরিচালনা করা হচ্ছে যাকে করোনাকালে প্রযুক্তির ব্যবহারে ইতিবাচক দিক বলা যায়। নারী আন্দোলন কর্মসূচিকে চলমান রাখতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নানা সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কোর্সটির অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষক ‍বিভিন্ন শিক্ষার্থীর যে যোগাযোগ হয়েছে, আলোচনা হয়েছে এর মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের ধারণাকে একটি বৃহৎ পরিসরে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে পরিবর্তন দেখা গেছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিজেদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আহ্বান জানান ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও অনলাইনে অধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ কোর্সটির প্রতি সকলের অনেক আগ্রহকে তুলে ধরেছে। ক্লাসচলাকালীন সময়ে প্রচুর প্রশ্ন এসেছে যা ইতিবাচক। শিক্ষার্থী রা জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বুঝতে চায়; এই প্রতিক্রিয়া সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কোর্সটি জেন্ডার সংবেদনশীল সমাজ তৈরি করতে কিছু রসদ দিয়ে দিয়েছে যা স্বচ্ছভাবে, জেন্ডার ইস্যূকে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিজীবনে , কর্মজীবনে ও সমাজজীবনে বুঝতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি সকলের মধ্যে ক্রিটিক্যাল কনসাসনেস তৈরির একটি ক্ষেত্র তৈরি করবে যা নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে চলমান নানা বাধা, অসমতা,রাজনীতিকে চিহ্নিত করার পথকে আরো উন্মুক্ত করবে।, তারা আরো বলেন,নারীর সমতা প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামী মনোভাব তৈরি করা, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব দূর করে সমতাভিত্তিক ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাবেন নিয়মিত । তারা এসময় কোর্সটি অনলাইন এবং অফলাইনে পরিচালনা করার অনুরোধ জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন জেন্ডার ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যূটির আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আজকের আলোচনা অত্যন্ত চমৎকার। নারী জাগরণে, তাদের প্রতি অন্যায় অবিচার প্রতিরোধে মহিলা পরিষদের কর্মসূচী অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এখনো নারীর প্রতি বৈষম্য আছে তার মধ্যেও নারীর মধ্যে যে জাগরণ হয়েছে তা ইতিবাচক। একটা ন্যায়সম্মত সমাজ গঠনের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি সংগঠনকে সার্টিফিকেট কোর্সটি নিয়মিতভাবে চালু রাখার আহ্বান জানান। তিনি এসময় মহিলা পরিষদের নিরন্তর সফলতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে কোর্স সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন কোর্স শিক্ষার্থী প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জেন্ডার স্পেশালিষ্ট, (বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রকল্প) নাসরীন নাহার, ডট কন্সাল্টিং, ঢাকা এর সিইও সৈয়দ ফয়সল আহমদ এবং অনিন্দিতা বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার । তারা বলেন মহিলা পরিষদের এই কার্যক্রম অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কোর্সটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সহায়তা দেয়া জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন কোর্সগুলোর মাধ্যমে একটি বিষয় কিভাবে বিশদে উপস্থাপন করা হয় তা জানতে পেরেছি, জেন্ডার ইস্যূ সম্পর্কে, ধর্ম ও রাজনীতির কারণে নারীর অধ:স্তনতা, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ সমাজ তৈরি নানা এনাটিক্যাল দিক জানতে পেরেছি, নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে জেনেছি। নিজেদের চিন্তার ক্ষেত্রে পরিবর্তনে এনেছে, নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে কোর্সটির থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান সহায়ক হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদের সদস্য শাহজাদী শামীমা আফজালী, সালেহা বানু এবং আফরুজা আরমান।

অনলাইনে অনুষ্ঠিত ১১তম সার্টিফিকেট কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং কর্মকর্তা সহ ৬৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সার্বিক অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদ সম্পাদক রীনা আহমেদ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গত ১২ আগস্ট থেকে ০৬ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত ‘‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্স অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কোর্সটিতে ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, শিক্ষক এবং ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কর্মরত চাকুরীজীবি শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৫ জন অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন