কুমিল্লার শহরের বাজারে মাছ কিনতে গেলে মৎস্য বিক্রেতারা হাঁকডাক দিয়ে কেউ বলেন- দেবিদ্বারের, কেউ বলেন দাউদকান্দি, হোমনা, চান্দিনার মাছ। আবার সদর দক্ষিন উপজেলার পদুয়ার বাজারের কাছে মাছ কিনতে গেলে শোনা যাবে- লাকসাম, বরুড়া, বাগমারা, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোটের মাছ।বাজারে মৎস্য বিক্রেতাদের প্রতিদিনের এমন হাঁকডাকেই জানান দেয় কুমিল্লা নি:সন্দেহে সুস্বাদু মাছের অভয়ারণ্য।
প্রাকৃতিকভাবেই কুমিল্লার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা বাংলাদেশে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।আবার কুমিল্লার মাছ দেশের অন্য জেলায় উৎপাদিত মাছের চাইতে অনেক সুস্বাদু। এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘী, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে কুমিল্লা জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়।মৎস্য সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটছে কুমিল্লায়।
কুমিল্লায় নদ-নদী, মুক্ত জলাশয় আর ব্যক্তি উদ্যোগে পুকুর দিঘীতে মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য আসছে। বিশেষত গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও তরুণ-যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কুমিল্লায় প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। টানা সময়ধরে মাছচাষে বিপ্লব সৃষ্টি করে যাচ্ছে কুমিল্লা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ষোল উপজেলার ৮৪ হাজার ৪২৪টি পুকুরে প্রতি মৌসুমে ১লাখ ৫হাজার ৭৩৮ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়াও প্লাবন ভূমি, খামার, বেল ইত্যাদিতে লক্ষাধিক মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।
কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলের দাউদকান্দি, মুরাদনগর, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, চন্দিনা উপজেলায় প্রায় ৪হাজার হেক্টরের ৭০টি প্লাবন ভূমিতে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিকটন মাছ। জেলেদের পাশাপাশি ফসলি জমির কৃষকরাও প্লাবন ভূমির মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার শিক্ষিত তরুণরাও মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সরপুঁটি, তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভারকার্প, পাঙ্গাশ, ঘাসকার্পসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে। প্লাবন ভূমির মাছ চাষে তরুণ ও যুবরাও আগ্রহী হয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বাংলাদেশে দাউদকান্দিতেই প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু হয়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ এখন সারাদেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ উপজেলায় মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছে মৎস্যচাষীরা।
কুমিল্লা জেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৯৯ হাজার মেট্রিকটন। আর উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৪২ মেট্রিকটন মাছ। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত সোয়া লাখ মেট্রিকটন মাছ বেশি উৎপাদিত হয়ে এখানকার প্রায় ৬০লাখ জনগোষ্ঠীর আমিষ পূরণ করে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাকি সিংহভাগ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন