খুলনায় স্থানীয়ভাবে ডুমুরিয়া উপজেলাকে তরকারির ডিপো বলা হয়। প্রায় সব ধরণের তরকারি ও শাকসবজি এই উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে আবাদ হয়। সড়কপথে শহর থেকে গড় দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। উৎপাদিত তরকারি পরিবহণ করা হয় ভ্যানে। মাঝেমাঝে ইজিবাইক ও পিকআপে। এই ১৫ কিলোমিটার পার হলেই তরকারির দাম বেড়ে যায় প্রায় ৩ গুন। উৎপাদনকারী কৃষকরা উচ্চমূল্য পায় না। লাভ নিয়ে যায় মধ্যসত্ত্বভোগীরা।
এই শীতে ডুমুরিয়ার প্রায় ৩০ হাজার মৎসঘেরের আইলে ব্যাপকভাবে লাউ, ঢেঁড়শ, ধুন্দল, কাঁচামরিচ, শিম, পুঁইশাক প্রভৃতি তরকারি চাষ হয়েছে। কৃষক মাঠে প্রতি পিস লাউ বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়। ধুন্দল ১৫ টাকা, ঢেঁড়শ ১৫ টাকা কেজি। এই তরকারি খুলনার বাজারে উঠলে লাউ প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঠে পুঁইশাক ১০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বাজারে তা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে উপজেলার শীতকালীন তরকারির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। ফুলকপি কৃষকরা বিক্রি করছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। একইভাবে ২০ টাকার পাতা কপি ৫০ টাকা, ২০ টাকার মুলা ৪০ টাকা, ৪০ টাকার শিম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কমলপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল, মোমিনুল ও রেজাউল জানায়, ব্যাপারীরা এসে তরকারি কিনে নিয়ে যায়। একসাথে এতো তরকারি ব্যাপারী ছাড়া বিক্রি করা যায় না। আমরা কোনো রকম উৎপাদন খরচ রেখে তাদের কাছে তরকারি বিক্রি করে দেই।
তরকারি ব্যাপারী গুটুদিয়া গ্রামের মোস্তফা মোড়ল জানান, আমরা তরকারি কিনে তা খুলনার পাইকারী বিক্রেতাদের দেই। তারা আবার খুচরা বাজারে বিক্রি করে। বিভিন্ন রকম টোল দিতে হয়। ফলে বাজার আর মাঠ পর্যায়ে তরকারির দামে বেশ পার্থক্য।
খুলনা কৃষি বিভাগ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলায় বছরে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার তরকারি উৎপাদিত হয়। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেলে তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হতো।
এদিকে, খুলনার বাজারে শীতের তরকারির সমারোহ থাকলেও দাম প্রায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বাজারে বিক্রেতাদের মুখে হাসি আছে, কিন্তু ক্রেতাদের নেই। খুলনার বড় বাজার, চিত্রালী বাজার, দৌলতপুর বাজার, হাউজিং বাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন তরকারির ছড়াছড়ি। বেশিরভাগ সবজি আগাম আবাদের। শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পাতা কপি ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ওলকপি ৬০ টাকা, মাঝারি আকারের লাই ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, শাল শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা, কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারো এখনো পেঁয়াজের কালি (পাতা), নতুন আলু ওঠেনি। তবে পেঁপে ও উচ্ছার দাম অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা কম। পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং উচ্ছা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চিত্রালী বাজারের তরকারি বিক্রেতা আনিস জানান, পাইকারী বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেশি। ডিসেম্বরের শেষদিকে তরকারির দাম কমে আসবে বলে তিনি জানান। একই বাজারে তরকারি কিনতে আসা ব্যাংক কর্মচারী হাফিজুর রহমান আক্ষেপ করে জানান, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি।
খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ পাইকারী বাজারের আড়তদার আমিনুল ইসলাম জানান, তরকারি দূরদুরান্ত থেকে আসে। পরিবহন খরচ এখন বেড়েছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে তরকারির দাম বেশি। তাই পাইকাররা দাম কিছুটা বেশি রাখছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন