এস কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে : স্বাধীনতা-উত্তর এবং পরবর্তী প্রায় ৪৩ বছর যাবত শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ি এলাকা রাংটিয়া- জামালপুর রেলপথ স্থাপনের প্রত্যাশা ছিল শেরপুর গারো পাহাড় তথা জেলার উপর দিয়ে যাতায়াতকারি জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন বৃটিশ সরকারের আমলে উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশের সাথে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া থেকে শেরপুর সদর হয়ে জামালপুর জংশন পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের প্রাথমিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর (ভারত-পাকিস্তান) বিষয়টি স্থবির হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সত্তর দশকের শেষের দিকে তৎকালীন রেল বিভাগ পুনরায় জামালপুর-ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া রেলপথ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ আর আলোরমুখ দেখেনি। স্থানীয়ভাবে ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া-জামালপুর রেলপথ স্থাপনের দাবিতে মাঝে-মধ্যেই পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশের পাশাপাশি শেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলপথ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্র্র্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘ ৫০ বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণে আলোরমুখ দেখতে শুরু করেছে ঝিনাইগাতী তথা শেরপুরবাসী ইদানীং। বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর জেলার পিয়ারপুর রেলস্টেশন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দিয়ে শেরপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা ৫শ’ ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে শেরপুরে রেলপথ স্থাপনের এমন খবরে গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মনে খুশির জোয়ার বইছে। বর্তমানে শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ এবং জামালপুর হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মহাসড়ক পথে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য ও মালামাল পরিবহন করা হয়। এছাড়া সড়ক পথে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও মাত্র ২শ’ কিলোমিটার দূরত্বের রাজধানী ঢাকায় যেতে সময় লাগছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। অথচ দূরত্ব অনুযায়ী ঝিনাইগাতী-ঢাকা সময় লাগার কথা মাত্র তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময়ের জন্য যাত্রী সাধারণকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমনি পণ্য পরিবহনেও নানা ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তবে শেরপুরে রেলপথ স্থাপন হলে সাধারণ মানুষের যেমন ভোগান্তি কমবে তেমনি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সহজলভ্য ও ব্যয়ভার অনেকাংশে কমে যাবে বলে গারো পাহাড়ের বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে ডিজি তফাজ্জল হোসেন শেরপুরে নতুন রেলপথ স্থাপনের সিদ্ধান্তের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শেরপুরে রেলপথ স্থাপন করার জন্য সব ধরনের সার্ভের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। এখানে রেলপথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সরকার অবগত। বর্তমান সরকারের আমলে শেরপুরে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন