শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরণের দায়িত্বগ্রহণ

প্রধানমন্ত্রী যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন তা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোটার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৪৭ পিএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বহিস্কারের তিনদিন পর রবিবার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন প্যানেল মেয়র ও ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আসাদুর রহমান কিরণ। দুপুরে অপর দু’জন প্যানেল মেয়র, বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বিপুলসংখ্যক আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে মো: আসাদুর রহমান কিরণ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে জাহাঙ্গীর আলম ঘরোয়া আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তি করার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। জাহাঙ্গীর আলম আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন কাটপিস সুপার এডিট করার কথা বললেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বড় একটি অংশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে। গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে মিছিল ও সমাবেশ থেকেও জাহাঙ্গীরকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদ থেকে বহিস্কারের দাবী জানানো হয়। দলের অপর একটি অংশ জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে বক্তব্য রাখলেও দৃশ্যত: গাজীপুরে দু’টি গ্রুপের সৃষ্টি হলে জাহাঙ্গীর অংশত: কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারাও নড়ে-চড়ে বসে বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে শো-কজ করে ১৫দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে শো-কজের জবাব দিলেও সে জবাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এমনকি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে খবরটিও গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
১৯ নভেম্বরের সভায় জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাাদক এবং দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় হয়। পাশাপাশি মেয়র পদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। খবরটি সন্ধ্যার পর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হলে শহরে আনন্দ মিছিল বের ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। পরদিন জাহাঙ্গীর আলম তার বাসভবনে এক প্রেসব্রিফিং-এ তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত পুনবিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে কাজ করার সুযোগ চান।
এ অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদ হারানো সময়ের ব্যাপারে হয়ে দাঁড়ায়। গত ২৫ নভেম্বর বিকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে থেকে বহিস্কার করা হয়। পাশাপাশি তিন জন প্যানেল মেয়রের নামও ঘোষণা করা হয়। এরা হলে যথাক্রমে ৪৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ, ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল আলিম মোল্যাহ এবং সংরক্ষিত মহিলা কউন্সিলর আয়েশা আক্তার।
আসাদুর রহমান কিরণ এর পূর্বেও ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে ২৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দুটি নির্বাচনেই তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। প্রথম নির্বাচনে বিএনপি দলীয় নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান বিভিন্ন মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে ২০১৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হন। সাড়ে তিন বছরের মাথায় তিনি মেয়র ও দলীয় পদ দু’টিই হারালেন।
মেয়র পদে দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম। জনাকীর্ণ হলরুমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আব্দুল আলিম মোল্লা, আয়েশা আক্তার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: আতাউল্লা মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, মো: ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মহিউদ্দিন মহি, মো: ফজলুল হক, কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু, কাউন্সিলর জাবেদ আলী জবে, কাউন্সিলর মো: শাহাজাহান সাজু, কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল প্রমুখ।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার। তিনি যে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে আমার উপর গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন তা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সকলের সহযোগিতা ও দোয়া চাই। গাজীপুরের উন্নয়ন আমি অব্যাহত রাখব। মহানগরীর নাগরীকরা যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ও অন্যদের মতামত নিয়ে ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পূর্বের মেয়রের বিধিবর্হিভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সে সুপারিশের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন