স্টাফ রিপোর্টার : এবার স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীদের নিয়ে মুখোমুখি অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও অর্থ মন্ত্রণালয়। আইনের মারপ্যাঁচে ডিএনসিসির স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের সহস্রাধিক কর্মচারীর চাকরি এবং প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির বিষয় নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক এবং সকল কর্মকর্তা গভীর পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা কর্মচারীদের মানবিক বিষয়টিও বিবেচনা করছেন। মেয়র গত সপ্তাহে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। সর্বদলীয় কর্মচারীদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীরা সরকারি কর্মচারী না। যেহেতু তারা সরকারি কর্মচারীই না সেহেতু তাদের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আর কোনো মতামতই দেয়নি। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই মন্তব্যের পরই ডিএনসিসির কর্মচারীদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত এসেছে। কিন্তু আগের সরকারের আমলে স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীরা পে-স্কেল পেয়েছেন্।
গত দুই মাস আগে ডিএনসিসি থেকে স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীদের অষ্টম জাতীয় স্কেলে সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতের জন্য আবেদন জানানো হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডিএনসিসিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জবাব পাঠানো হয়।
ওই চিঠির জবাব আসার পরই ডিএনসিসির স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীরা এবার বিপদে পড়েছেন। কারণ গত জুলাই থেকে তারা অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বর্ধিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভাষ্যমতে ডিএনসিসির স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের ক্লিনারসহ সহ¯্রাধিক কর্মচারীকে তাদের বর্ধিত বেতন ভাতা ফেরত দিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অষ্টম পে-স্কেলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন (২০১৬ সালের) গত জুলাই থেকেই কার্যকর হয়েছে। ফলে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নতুন স্কেল অনুযায়ী বর্ধিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সব সিটি কর্পোরেশনের স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের ক্লিনারসহ কর্মচারীরাও বর্ধিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
সূত্র মতে, এবার নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ সব সিটি কর্পোরেশনের স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারীরা বর্ধিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন। তা হলে কেনো ঢাকা উত্তর সিটির স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের ক্লিনার ও কর্মচারীরা বর্ধিত বেতন ভাতা পাবে না।
ডিএনসিসির সচিব নবিরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারী মানতে নারাজ। মন্ত্রণালয় শুধু জানে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যাদের চাকরি স্থায়ী হয়, তারা স্কেল ভুক্ত হন। আর যাদের চাকরি দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ অর্থাৎ কাজ আছে মজুরি আছে, কাজ নেই মজুরি নেই- এই শ্রেণির কর্মচারীরাই হলো মাস্টার রোলের। তাদের চাকরির বয়স ৫৯ কিংবা ৬০ বলতে কিছু নেই। কাজ করতে পারলে মজুরি পাবেন। কাজ না করতে পারলে মজুরি পাবেন না।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, সরকারের স্কেলভুক্ত কর্মচারী হলে তাদের সরকারি নিয়ম মানতে হবে। তারা আর মাস্টার রোলের কর্মচারী থাকবেন না। তাদের চাকরির বয়স ৫৯ বছর নির্ধারিত। এরপর অবসরে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ডিএনসিসির স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের ক্লিনারসহ কর্মচারীদের বিষয়টি আগের মেয়র এবং সরকারের উচিত ছিল সরাসরি স্কেলভুক্ত করা। মাস্টার রোল শব্দটা রাখা উচিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কর্মচারীবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং মেয়র মহোদয় উদ্যোগ নিলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন।
এদিকে, ক্লিনারদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কাস ইউনিয়েনের ঢাকা উত্তর সভাপতি আবুল কালাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের ক্লিনার সামান্য বেতনে নগরবাসীর সেবা করেন। ভোর রাত থেকে দিনের বেলায় নগরীতে ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার করেন। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ স্কেলভুক্ত মাস্টার রোলের কর্মচারী হিসেবে সরকারি স্কেলেই নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন। এতদিন এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি।
তারা আরও বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীর চাকরিতে কোনো বয়স নির্ধারণ করা ছিল না। যতদিন সুস্থ আছেন ততদিন চাকরি করবেন। কীসের চাকরি বয়স, আবার ৫৯ বছর। এসব করলে ঢাকা শহর আর পরিষ্কারের লোকজন থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন