করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। করোনার এই নতুন ধরন নিয়ে বিজ্ঞানীরাও বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে। যে কারণে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে- আর এর ফলে কোভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে। এদিকে ওমিক্রন ছড়ানো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ২৪০ জনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশ। এসব লোক বিমানবন্দরে বাড়ির ঠিকানা ভুল দিয়ে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অ্যাড্রেস করতে পারছে না তারা কোথায় আছে। তারা ওই দেশ থেকে এসেছে। এমনকি মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছে। ভুল ঠিকানা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দ্রুত আফ্রিকা থেকে আসা এসব লোকদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করে কঠোর নজরদাড়ির কথা বলেছেন। অন্যথায় এটি দেশে মহামারি আকারে আবারও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে আরো দেখা গেছে, ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অর্থাৎ যারা আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন- তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার দৃষ্টান্ত কম হলেও- ওমিক্রনের ক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া ওমিক্রনের উপসর্গ অত্যন্ত ‘মৃদু’। ওমিক্রন ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছে পৃথিবীর অন্তত ১১টি দেশে। এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যখন নানা দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে, তখন বাংলাদেশে আফ্রিকা থেকে আসারা বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে চলে গেল। আর তাই এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ওমিক্রন যেসব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা লোকজনের ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে গতকাল জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
স¤প্রতি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন, তারা যেভাবে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাড়িতে চলে গেলেন এ রকম যদি ওসব দেশ থেকে আরও লোকজন আসে তাহলে কি তারা সরাসরি বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন নাকি আপনারা ব্যবস্থা নেবেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ওরা তো আগে চলে গেছে বাড়িতে। আমরা তো ওমিক্রন সম্বন্ধে জানলামই ৭ দিন হলো। সব কিছু বলার আগেই তো ওখানে চলে গেছে। এর মধ্যেও আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তারা ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটিও পরামর্শ দিয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, এই যে লোকজন আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। আমরা অ্যাড্রেস করতে পারছি না। তারা ওই দেশ থেকে এসেছে। মোবাইল ফোনটাও বন্ধ করে রাখেছে। ভুল ঠিকানা দিয়েছে। এই জিনিসগুলো কী রকম! এ জন্য আমরা ওই সব দেশ থেকে আসা লোকজনের ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি করব। যারা আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসবে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন তো থাকবেই। আমরা ওখান থেকে আসতেই নিরুৎসাহিত করব। তিনি বলেন, জনগণকে টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে প্রতিটি সরকারি দফতরে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি নির্বাচন চলবে, কিন্তু যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করে। সভা-সমাবেশগুলো যেন সীমিত করে। আপনারা জানেন এখনো তো আমরা ভালো আছি। এই ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা আমরা দিয়েছি। যে পর্যায়ে আশা করেছিলাম সে পর্যায়ে আমরা যেতে পারিনি। ৭ থেকে ৮ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম আরও বেশি দেয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এটা বাড়ানো যায়। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন, তাদের আমরা বলেছি যে আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করেন।
এদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা ৭ জনকে কঠোর হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোমবার জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে স¤প্রতি বাংলাদেশে আসা ৭ জনের নামের তালিকা আমরা পেয়েছি। এদের মধ্যে ৫ জনের বাড়ি কসবায় এবং ২ জনের বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলায়। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তদন্ত করে যেন তাদের কঠোর হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন